চাষিদের ধান কেনা প্রক্রিয়া চলছে। কামারপুকুর ডাকবাংলোতে।
সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ক্ষেত্রে গুণমানের বিচারে কুইন্টালপ্রতি ৫-১০ কেজি বাদ দেওয়ার অভিযোগ থাকে প্রতি বছরই। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়। তার জেরে সরকারি স্তরে পরিদর্শনও হয়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও বদল হয় না। এ বারও যথারীতি কুইন্টালপ্রতি ৫-৭ কেজি ধান বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠছে হুগলি জুড়েই।
এ বারও চাষিদের অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য বিডিওকে মাথায় রেখে কৃষি আধিকারিক এবং চালকল-মালিকদের প্রতিনিধিকে নিয়ে ব্লকপিছু তিন জনের কমিটি রয়েছে। তবু বিডিওদের কাছে চাষিদের অভিযোগ, ধান পরিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও অন্যায় ভাবে পরিমাণ কমানোয় তাঁরা যথাযথ সরকারি সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না।
শুক্রবার গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) ধান বিক্রি করা তেঁতুলমুড়ি গ্রামের চাষি দেবাশিস পালুইয়ের অভিযোগ, “ভাল করে ধান শুকিয়ে, চালুনিতে ধুলো-বালি বাছাই করে ধান এনেও কুইন্টালে ৫ কেজি করে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪০ কুইন্টাল ধান এনে ৩৮ কুইন্টালের দাম মিলছে।’’ একই অভিযোগ আরামবাগের গৌরহাটির কৃষক শঙ্কর মাইতি, পুড়শুড়ার ডিহিবাতপুরের কার্তিক পাল, খানাকুলের চব্বিশপুরের শেখ হসমতদের। তাঁরা জানান, কুইন্টালপ্রতি চার কেজি পর্যন্ত ধান বাদ গেলে তাঁদের তত আপত্তি নেই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বাদ দেওয়া হচ্ছে।
চাষিদের পক্ষে লিখিত ভাবে বিভিন্ন ব্লকে অভিযোগও জমা পড়েছে। গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও সুরশ্রী পাল বলেন, "ইতিমধ্যে ৩৮ জন চাষি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি তা মহকুমা থেকে জেলা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানিয়েছি। এরপর যেমন নির্দেশিকা পাব, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টার নিষ্পত্তির জন্য চালকল-মালিকদের সঙ্গে অনেকবার আলোচনায় বসেছি। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এর থেকে কম পরিমাণ বাদ দিয়ে তাঁরা ধান নিতে পারবেন না।”
চাষির ওজন করে আনা ধান কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে?
আরামবাগ চালকল-মালিক সংগঠনের সভাপতি সুনীলকুমার ঘোষ বলেন, “অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানে ধান পরিষ্কার করার যন্ত্র নেই। এক কুইন্টাল ধান থেকে ৬৮ কেজি চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু ৬৩ কেজির বেশি হচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকারি স্তরে আলোচনা করেই ধানের মান অনুযায়ী কুইন্টালপ্রতি আমরা ন্যূনতম পাঁচ কেজি করে বেশি ধান নিচ্ছি।”
এ বছর কুইন্টালপ্রতি ধানের সরকারি সহায়ক মূল্য ধার্য হয়েছে ১৮৬৮ টাকা। সরকারি কেন্দ্রগুলিতে দিলে উৎসাহ-ভাতা হিসাবে আরও অতিরিক্ত ২০ টাকা পাচ্ছেন চাষি। তাঁদের অভিযোগ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, "প্রতিটি ব্লকে যে তিন জনের কমিটি আছে, সেখানে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে চাষিদের। তাঁরাই বিষয়টা খতিয়ে দেখবেন।’’
অতীতে চাষিদের এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভের একাধিকবার শিবির পরিদর্শন করতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে। এ বার তিনি বলেন, “অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক ব্লকে কমিটি আছে। আবার এটাও ঠিক যে চাষিদের ধানে অনেক সময় নোংরা মেশানো থাকে, আর্দ্রতা বেশি থাকে। অনেক চালকল সেই সুযোগ নিয়ে বেশি ধান অন্যায় ভাবে বাদ দেয়। দু'দিকেই সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয়।’’