—প্রতীকী ছবি।
শীতের কামড় বাড়ছে। কিন্তু ডেঙ্গি বিদায়ের লক্ষণ নেই শ্রীরামপুর শহরে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, করোনার মতোই ডেঙ্গি নিয়েও নজরদারি চলছেই। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারের নির্দেশিকা মেনে ডেঙ্গিকে পরাস্ত করতে সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। তবে, কিছু সমস্যার কথা উঠে আসছে পুরসভার লোকজনের মুখেই।
পুরসভা সূত্রের খবর, চলতি বছরে এ শহরে অন্তত ১৩৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত গড়পরতা কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছিল। তবে, দুর্গাপুজোর সময় থেকে মশাবাহিত এই অসুখ কামড় বসাতে শুরু করে। সেই প্রকোপ চলছেই। মাসখানেক আগে খটিরবাজারে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক যুবক মারা যান।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, মূলত মাহেশ এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়ায়। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার শৌভিক পণ্ডা জানান, ২০, ২৩, ২৪ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও কয়েক জনের শরীরে ডেঙ্গি ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। তবে, ক্রমে ডেঙ্গির দাপট কমছে বলে তাঁর দাবি।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা কো-অর্ডিনেটর ভারতী সেন বলেন, ‘‘করোনার ক্ষেত্রে যেমন আমরা বাড়ি বাড়ি পরিষেবা দিতে পিছপা হইনি, তেমনই সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রেও সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও খামতি নেই।’’
পুর-স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের দাবি, সরকারি নির্দেশিকা মেনে নির্দিষ্ট সময় থেকেই বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ চলছে। বাড়িতে কোনও পাত্র বা টব ইত্যাদিতে জল জমে রয়েছে কিনা, তা দেখার পাশাপাশি বাসিন্দাদের জ্বরের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সেই মতো সাফাই বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে। সাফাইকর্মীরা জঞ্জাল বা নিকাশি নালা সাফাইয়ের কাজ করছেন। এ ছাড়াও মশার লার্ভা মারতে তেল ছেটানো হচ্ছে। নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। ডেঙ্গি-মোকাবিলায় সাফাইয়ের কাজ বিকেলেও চলেছে। কিন্তু কিছু খামতিও নজরে আসছে।
কেমন?
শৌভিক বলেন, ‘‘এমনিতেই নাগরিকদের একাংশ সমীক্ষায় যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে চান না। তার উপরে করোনা পরিস্থিতিতে এ বার অনেকেই জ্বরের তথ্য গোপন করে যাচ্ছেন। এতে কাজে অসুবিধা হচ্ছে। সঠিক তথ্যও অনেক সময় হাতে আসছে না।’’ পর্যাপ্ত সাফাইকর্মী নেই বলেও অনেকের দাবি।
করোনা-কালে ডেঙ্গি যাতে বাড়তি সমস্যা হয়ে না-দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে গোড়া থেকেই প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন পুরসভাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পুজোর সময় থেকে ডেঙ্গি নিয়ে শ্রীরামপুর এবং রিষড়ার পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর চিন্তায় পড়ে। কিছু দিন আগে পতঙ্গবিদ এসে এখানকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। মশা জন্মাতে পারে এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করে তা সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হয়। কিছু পরিত্যক্ত জায়গায় জল জমা এবং তা থেকে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়েও পুরসভাকে সতর্ক করা হয়।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ব্যক্তিগত জমি বা পুকুর পরিষ্কার করা নিয়ে তাঁদের পক্ষে বিশেষ কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।