যানজট: ডানকুনির কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সারি। ছবি: দীপঙ্কর দে
মিছিল ঠেলে গাড়িটা কোনওরকমে ডানকুনি টোলপ্লাজ়া পর্যন্ত এনেছিলেন হিন্দমোটরের বাসিন্দা বিপাশা দাস। টোল ট্যাক্স দেওয়ার পরে আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলেন না। এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘টোল দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চড়ব আমরা, আর আপনারা ওদের রাস্তা দিয়ে মিছিল করতে দেবেন, এটা চলতে পারে না।’’
বিপাশা একা নন। তাঁর মতো ক্ষুব্ধ অনেকেই। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি জায়গায় সংস্কার কাজ চলায় এমনিতেই যানবাহনের গতি কমে দিয়েছে। তার উপরে শুরু হয়েছে জাতীয় সড়কে রাজনৈতিক কর্মসূচি। এই দুইয়ের ধাক্কায় বিপাকে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা।
সিঙ্গুরে পরিত্যক্ত টাটাদের কারখানা সংলগ্ন দুর্গাপুর একসপ্রেসওয়ে হয়ে উঠেছে সব রাজনৈতিক দলের মিছিল করার পছন্দের জায়গা। শাসক-বিরোধী, সব দলই গত কয়েক দিনে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরুদ্ধ করে মিছিল করেছে। কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতায় গত রবিবার সিঙ্গুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে জুড়ে মিছিল করে তৃণমূল। পুলিশের দাবি, সে দিন মিছিলে ১৫ হাজার লোক হয়েছিল। তেমনই ওই আইনের সমর্থনে এক্সপ্রেসওয়েতে মিছিল করেছে বিজেপি। সম্প্রতি কৃষি আইনের বিরোধিতায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেছিল বামেরাও। এই সবই ঘটেছে গত এক পক্ষকালজুড়ে। মিছিল বেরলেই থমকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। কুড়ি মিনিটের পথ পেরতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা। ফলে, মেজাজ হারাচ্ছেন যাত্রীরা।
গত রবিবার বিকেলে দুর্গাপুর থেকে হিন্দমোটরে বাড়ি ফেরার পথে অনেক জায়গাতই গাড়ি থামাতে হয়েছিল বিপাশাকে। তাঁর কথায়, ‘‘সিঙ্গুরে হিমাদ্রি কেমিক্যালসের আগে প্রবল যানজট ছিল। একটা লেন দিয়ে গাড়ি চলছিল। ডানকুনির দিকে একটু একটু করে যাচ্ছিল গাড়ি। রাস্তায় গাড়ির চাপ অত্যন্ত বেশি ছিল। শুনলাম, কী যেন একটা
মিছিল হচ্ছে।’’
জাতীয় সড়ক আইন মোতাবেক, জাতীয় সড়ক অবরোধ করা আইনবিরুদ্ধ কাজ। পুলিশ চাইলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারে। কিন্তু গত ১৫ দিনের ঘটনা বলছে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ বা ওই জাতীয় সড়ক রুদ্ধ করে একাধিক মিছিল হলেও, পুলিশ কড়া কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
কী বলছেন পুলিশকর্তারা?
চন্দননগর কমিশনারেটের কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে কোনও কর্মসূচি পালনে পুলিশ অনুমতি দেয় না। তবে কেউ সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ মামলা করে। ’’
রবিবারের তৃণমূলের মিছিলের প্রসঙ্গ টানতে হুগলি জেলা পুলিশের (গ্রামীণ) ডিএসপি ট্রাফিক অয়ন সাঁধুখা বলেন, ‘‘সে দিন সিঙ্গুরে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল ছিল। সেই কারণে একটি লেন দিয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি চলাচল করে। তার ফলে যানজট হয়। রাস্তা সংস্কার এবং সেই কাজে বিলম্ব হওয়াও যানজটের আরএকটি কারণ।’’
কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘এটা বাস্তব যে, রাস্তা রুদ্ধ হলে যাত্রীদের কষ্ট হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক-মারা কালা আইনের প্রতিবাদে আমাদের ডাকা ওই মিছিলের কারণে অল্প সময়ের জন্য হলেও সিঙ্গুরে জাতীয় সড়কে যানজট হয়ে ছিল। আমরা দুঃখিত। পরবর্তী সময়ে সর্তক থাকব। তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও কিন্তু জরুরি ছিল।’’
এ বিষয়ে সিপিএম জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন,‘‘এটা ঠিকই যে, মানুষের সাময়িক অসুবিধা হয়। কিন্তু তার কয়েকশো গুন বেশি অসুবিধা হয় সরকারি পদক্ষেপে। যার প্রতিবাদেই আমাদের আন্দোলন করতে হয়।’’ আর বিজেপির সিঙ্গুর সাংগঠনিক সহ-সভাপতি সঞ্জয় পাণ্ডের মন্তব্য,‘‘জাতীয় সড়ক যাতে অবরুদ্ধ না হয়, সে ভাবেই কর্মসূচি পালন করেছি। তবে আমাদের মিছিলের জন্য কোনও সমস্যা হয়নি, এটা বলা যাবে না। তবে মানুষের কথা ভেবেই কর্মসূচি নিই।’’
শুধু মিছিল নয়, ডানকুনি সিগন্যাল পয়েন্ট, এফসিআই মোড়, দিল্লি রোডের অ্যাপ্রোচ থেকে বালি মাইতিপাড়ার রেল সেতু পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ না-হওয়ায় যানবাহনের গতি কমেছে অনেকটাই। তার জেরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডানকুনি টোলপ্লাজার আগে কাপাসহাড়িয়া এলাকায় যানজট ছড়াচ্ছে।
পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, পুজোর আগে ডানকুনি লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা সারানোর কাজ চলছে। জাতীয় সড়কের উপরে বড়সড় গর্ত এখনও চোখে পড়ছে অনেক জায়গায়। সোমবারও দিল্লি রোডের সার্ভিস রোডে রাস্তা মেরামতির কাজ চলছে। ফলে, গাড়ির চাপ বেড়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে।