বৃষ্টিতে নষ্ট দোপাটির চাষ। ছবি: সুব্রত জানা।
রোদের দেখা মিলছে কম। ক’দিন ধরেই কখনওও ঝিরঝিরে, কখনও প্রবল বৃষ্টির জেরে মাথায় হাত পড়েছে বাগনানের ফুলচাষিদের। কেননা, চাষ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে মরসুমি ফুলগাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ঝরে যাচ্ছে ফুল। নষ্ট হচ্ছে চারা। পরিস্থিতি যা, তাতে এই বৃষ্টি কয়েক দিন টানা চললে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তাঁরা মনে করছেন, এ ভাবে চললে পুজোর মরসুমে ফুলের দামও বাড়বে।
বাগনানে উদ্যানপালন দফতরের কোনও অফিস না থাকায় চাষ সংক্রান্ত যে কোনও বিষয় প্রথমে কৃষি দফতরই দেখে। বাগনান-২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক নীলরতন ভৌমিক বলেন, ‘‘সমস্যার কথা শুনেছি। তবে, চাষিরা কেউ লিখিত ভাবে কিছু জানাননি। জানালে সেটা উদ্যানপালন দফতরকে জানাব।’’ জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক অলোক মণ্ডল জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ‘সারা বাংলা ফুলচাষি সমিতি’র সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে বাগনানে ফুলচাষের ক্ষতি হচ্ছে। পুজোর সময় ফুলের সঙ্কট হতে পারে। বাড়বে ফুলের দামও।’’
বাগনান-১ ও ২ ব্লকের পানিত্রাস, শরৎ, ওড়ফুলি, দেউলটি, কাঁটাপুকুর, বাঁকুড়দহ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েকশো বিঘা জমিতে সারা বছর ধরে গোলাপ, গাঁদা, দোপাটি, অপরাজিতা-সহ নানা ফুল চাষ হয়। আবার চন্দ্রমল্লিকা, আস্তার, মুরগা, জারবেরা-সহ কয়েক ধরনের মরসুমি ফুলও চাষ হয়। এ ছাড়া, অ্যাসতেরাস, বটলব্রাশ, ঘোড়াপান-সহ নানা ধরনের বাহারি পাতার গাছের চাষও চলে। চাষিরা মরসুমি ফুল বা বাহারি পাতার গাছের চারা বসাতে শুরু করেন জুল-জুলাই নাগাদ। ফুল বিক্রিযোগ্য হয় অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ। কিন্তু এ বারে বর্ষায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুন মাস ও জুলাই মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত হাওড়ায় বৃষ্টি হয়েছে ৬২০.২১ মিলিমিটার। যা এই সময়ে গত বছরের দ্বিগুণ পরিমাণ। আর সেই কারণেই এ বার ফুলচাষে ক্ষতি বলে চাষিরা জানান। খেত ঘুরে দেখা গিয়েছে, ফুলগাছ এবং চারা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছের গোড়া পচে গিয়েছে। জবা গাছের গোড়া পচে গিয়ে পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ফুলও।
বাঁকুড়দহের ফুলচাষি পুলক ধাড়া মুরগা, জারবেরার মতো উন্নত জাতের ও দামি ফুলের চারা এবং দোপাটি, অপরাজিতার প্রায় সাড়ে চার হাজার চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সে ভাবে তিনি ফুল উৎপাদন করতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সব ফুলের বাজারদর ভাল। অথচ, ফুল বেশি পরিমাণে না হওয়ায় লাভ ভাল পাচ্ছি না। হাজার হাজার টাকা খরচ করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’’ একই দাবি করে চককমলার দেবাশিস সামন্ত বলেন, ‘‘এ ভাবে বৃষ্টি হলে আর ফুল উৎপাদন হবে কী ভাবে? এ বার একটু বেশি রোদ হলে চাষ বাঁচে। না হলে আরও ক্ষতি হবে।’’