স্টেশনে যাত্রীদের জন্য সাদা দাগ দিয়ে দূরত্ববিধির নির্দেশ। —নিজস্ব চিত্র।
ট্রেন চলবে অল্প সংখ্যক। তাও আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে।
রেল-রাজ্যের আলোচনার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা নিয়ে প্রমাদ গুণছেন সাধারণ মানুষ। অফিস-টাইমে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত যেখানে রীতি, সেখানে কোন পরিকাঠামোয় পরিস্থিতি সামলানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ, রেলের আধিকারিকদের একাংশও এই নিয়ে সংশয়ে। অনেকেই মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে হলে বেশি সম্ভব ট্রেন চালানো দরকার। হাতেগোনা ট্রেন চললে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে।
উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রেশমী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন অনেকেই মোটা টাকা গুণে ভাড়া গাড়িতে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ট্রেনে কেউ যেতে পারবেন, আর কেউ পারবেন না, সেটা হতে পারে না। মানুষকে আটকানো যাবে? সেটা করা উচিতও নয়।’’ খন্যানের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে অনুপ সরকারের কথায়, ‘‘সবাই ট্রেনে উঠতে না পারলে তো মহা সমস্যা হবে।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর ডিভিশনে নিত্যযাত্রীদের সংগঠন হাওড়া-জয়পুর প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সম্প্রতি ট্রেন চালুর দাবিতে বাগনান স্টেশনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সংগঠনের সম্পাদক অজয় দলুই বলেন, ‘‘ঘন ঘন ট্রেন চালাতে হবে। তাতে ভিড়ের সম্ভাবনা কমবে।’’
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, স্বাভাবিক সময়ে হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখায় সারাদিনে আপ-ডাউন মিলিয়ে ৬০ জোড়া ট্রেন চলে। শুধুমাত্র ব্যান্ডেল স্টেশনেই দৈনিক লোকাল ট্রেনের ৭০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। চুঁচুড়া, চন্দননগর, শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুর, কোন্নগর, উত্তরপাড়া, তারকেশ্বর, হরিপাল প্রভৃতি স্টেশনেও যাত্রীর চাপ প্রচুর। রেল-রাজ্য বৈঠকে ঠিক হয়েছে, স্টেশনে যাত্রী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
যদিও, রেল ও রাজ্য পুলিশ, আরপিএফ বা রেলের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা কম যাত্রীর ট্রেনে চড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে চিন্তিত। তাঁদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট একটি পথ দিয়ে স্টেশনে ঢোকা এবং বেরনোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বহু স্টেশনেই সাবওয়ে বা ওভারব্রিজের পাশাপাশি রেললাইন ধরেও প্ল্যাটফর্মে ওঠানামা চলে। এক রেলকর্মী বলেন, ‘‘কোনও দিকের মানুষকে অনেকটা ঘুরপথে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে হবে। এতে বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে।’’ রেল পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রচুর যাত্রীর চাপ এলে কী ভাবে সামলানো যাবে, সেটা স্পষ্ট নয়। যেমন নির্দেশ পাব, তেমন কাজ করব।’’
কোভিড কালে টিকিট ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথাও শোনা যাচ্ছে। গরিব মেহনতি মানুষ এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্নও থাকছে। বৈদ্যবাটীর এক মহিলা কলকাতায় পরিচারিকার কাজে যান। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘শুনছি, টিকিট নাকি মোবাইলে কাটতে হবে! আমার তো বড় ফোন নেই। পড়াশোনা জানি না। ও সব পারিও না। কী হবে, কে জানে!’’
ট্রেন চালুর দাবিতে সোমবার হুগলির বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ হয়। বৈদ্যবাটী স্টেশনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১২ ঘণ্টা রেললাইন এবং জিটি রোড অবরুদ্ধ থাকে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিত্যযাত্রীদের একাংশ রেলকর্মীদের বিশেষ ট্রেনে চাপেন। জিআরপি এবং আরপিএফের কর্মীরা স্টেশনে থাকলেও যাত্রীদের বাধা দেওয়া হয়নি। নতুন করে অশান্তিও হয়নি।
রেল সূত্রের খবর, মানুষের চাপ সামলাতে স্টেশন চত্বর ঘেরা হতে পারে। তবে, এ দিন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জেলা বা রেল পুলিশ বক্তব্য, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে, সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু দিন আগে থেকে দূরত্ববিধির জন্য রেলের তরফে বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গোল দাগ কেটে দেওয়া হয়। সম্প্রতি পান্ডুয়া স্টেশন চত্বর লোহার রড দিয়ে কার্যত ঘিরে ফেলা হয়েছে। স্টেশন সংলগ্ন রিক্শা এবং টোটো স্ট্যান্ড বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে।