Migrant Workers

পরিযায়ীদের গৃহ নিভৃতবাসে প্রশ্ন

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা বলছে, যে সব পরিযায়ী শ্রমিকের উপসর্গ রয়েছে, কেবল তাঁদেরই লালারসের নমুনা পরীক্ষা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৫:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি

দুই জেলাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বলছে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান। তাঁদের মধ্যে আবার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটাই বেশি। এই আবহে স্বাস্থ্য দফতর ওই শ্রমিকদের গৃহ-নিভৃতবাস বা হোম-কোয়রান্টিনে রাখার উপরে জোর দেওয়ায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে ক্ষোভ-বিক্ষোভও বাড়ছে। কারণ, এখন দেখা যাচ্ছে বহু আক্রান্তই উপসর্গহীন।

Advertisement

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা বলছে, যে সব পরিযায়ী শ্রমিকের উপসর্গ রয়েছে, কেবল তাঁদেরই লালারসের নমুনা পরীক্ষা হবে। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে পাঠাতে হবে। বাকিদের হোম কোয়রান্টিনে রাখা হবে। আগে বলা হয়েছিল মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং দিল্লি থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের সকলের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। নতুন নির্দেশিকায় এই তিনটি রাজ্যের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতকেও যোগ করা হয়। এই পাঁচ রাজ্যকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হলেও সকলের লালারসের নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হয়নি।

এই নির্দেশিকাকে ঘিরেই সাধারণ মানুষ এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিককে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। তাঁদের মধ্যে অনেক উপসর্গহীন আক্রান্তও থাকতে পারেন। ফলে, সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। তা ছাড়া, গরিব শ্রমিকদের একচিলতে ঘরে নিভৃতবাসে থাকাও প্রায় অসম্ভব। তাঁর সংস্পর্শে পরিবারের সকলেই আসবেন। ফলে, তাঁরা কী ভাবে নিয়ম মেনে থাকবেন, সে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

কারণ, ইতিমধ্যেই অনেক জায়গা থেকে ওই শ্রমিকেরা গৃহ নিভৃতবাসে থাকার নিয়ম মানছেন না, এই অভিযোগ উঠেছে।

অবশ্য ওই শ্রমিকেরা যাতে সব রকম নিয়ম মেনে চলেন, সেটা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, এ বার নজরদারি আরও কঠোর হবে। নিয়ম না-মানলে জরিমানা করা হবে। কিন্তু প্রত্যেক শ্রমিকের বাড়িতে নজরদারি চালানো আদৌ সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

হুগলিতে গত কয়েকদিনে নতুন করে মোট ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, গত দু’দিনে মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা ধনেখালি ও গুপ্তিপাড়ার মোট ৬ শ্রমিক আক্রান্ত। তাঁরা সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে নয়, বাড়িতে রয়েছেন। এতে গ্রামবাসীদের অনেকেই আতঙ্কিত। বেলমুড়ির মানিকপুরে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক গ্রামে ঢুকতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সোমবার।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘উপসর্গ রয়েছে, এমন প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাঁদের সরকারি কোয়রান্টিনে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের নিয়মিত খোঁজখবরও রাখা হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।’’

কিন্তু গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে হুগলিতেও। এর প্রতিবাদে বুধবার ধনেখালির বিডিওকে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির তরফে স্থানীয় বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাদের দাবি, গরিব পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে আলাদা ঘরে থাকা পরিসর নেই। তাই সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে তাঁদের রাখা হোক। বিধি অনুয়ায়ী তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিকবার। ওই সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী বলেন, ‘‘ঝড়ের পরে সরকারের এই হাত তুলে নেওয়ার মনোভাব আমরা বরদাস্ত করব না। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement