নির্মীয়মাণ আবাসন নিয়েই বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র।
কয়েক বছর ধরেই শহরের বহু আবাসন নির্মাণে বেনিয়মের অভিযোগ তো উঠছেই, রয়েছে দুষ্কৃতীদের মাতব্বরি নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভও।
তা সত্ত্বেও, রিষড়ার নানা জায়গায় কোথাও পুকুর বুজিয়ে, কোথাও জমি ‘দখল’ করে, কোথাও পুরনো বাড়ি ভেঙে যে ভাবে নির্মাণ হচ্ছে, তাতে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সরব পুরবাসী। অভিযোগ, পুরসভা সব জেনেও উদাসীন।
কয়েক মাস ধরে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ষষ্ঠীতলা লেনের একটি গলিতে আবাসন তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ, জমির পাশেই একটি বাড়ির দখল পেতে বাড়ির মালিককে নানা ভাবে চাপ এবং হুমকি দিচ্ছে প্রোমোটারের দলবল। কেননা, পরিবারটি বাড়ি বিক্রি করতে রাজি নয়। তাই তাঁদের বাড়ির এক পাশের রাস্তা আটকে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ঢালাইয়ের রড কার্যত ওই বাড়ির দেওয়ালে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারটি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা আবাসন নির্মাণের কাজও বন্ধ করে দিয়েছে।
কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, প্রোমোটারদের একাংশের একাধারে দুষ্কৃতী এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও দহরম-মহরম থাকায় কেউ তাঁদের ঘাঁটায় না। শহর জুড়ে প্রোমোটারি ব্যবসায় কুখ্যাত সমাজবিরোধী রমেশ মাহাতোর অঙ্গুলি হেলনেই প্রোমোটারদের একাংশের ‘দাদাগিরি’ও চরমে। বছর কয়েক আগে কুখ্যাত এক সমাজবিরোধীকে আদালতের লক-আপে টাকা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন রিষড়ারই এক প্রোমোটার।
সমস্যার কথা ঠারেঠোরে মেনেও নিয়েছেন তৃণমূলেরই একাধিক কাউন্সিলর। তাঁরা জানানি, জমি-বাড়ি কেনাবেচা করতে গেলেই দুষ্কৃতীদের টাকা দিতে হয়। আবাসন তৈরির ক্ষেত্রেও রীতিমতো বর্গফুট মেপে দুষ্কৃতীদের হাতে টাকা তুলে দিতে হয়। এক তৃণমূল কাউন্সিলর জানান, পুর-কর্তৃপক্ষ পাঁচ তলা আবাসনের অনুমোদন দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি ভাবে আবাসন আরও উঁচু করা হয়। পুরসভা স্রেফ জরিমানা করেই দায় সারে। তাঁর দাবি, ‘‘জরিমানার ক্ষেত্রেও যথেচ্ছ ছাড় দেওয়া হয়।’’
পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সুকুমার গড়গড়িও বলেন, ‘‘বর্তমানে রিষড়ায় প্রোমোটিংয়ের পিছনে রয়েছে মস্তানরা। মানুষ এমন সিঁটিয়ে রয়েছেন যে, মুখ খুলতে সাহস পান না। পুরসভার ভিতরে আমরা সংখ্যায় কম। তাই যা খুশি তাই চলছে।’’
পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউয়ের অবশ্য দাবি, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ষষ্ঠীতলা লেনের আবাসন নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওখানে প্রোমোটার তিন তলা আবাসন করছেন। পাশের বাড়ির থেকে যতটা ছাড় দেওয়া উচিত, ততটাই দিয়েছেন। তবুও পাশের বাড়ির অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে। আদালত যা নির্দেশ দেবে, আমরা তাই করব।’’
ষষ্ঠীতলা লেনের ওই পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন মহলে জানানোয় শাসানির মাত্রা বাড়ে়। খুনের হুমকি দেওয়া হয়ে। শাসকদলের এক নেতাও ফোনে হুমকি দেন। সব ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য মহিলা কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়ে পরিবারটি। পরিবারটির এক সদস্য বলেন, ‘‘ভিটে ছেড়ে যেতে চাই না। তাই আইনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
প্রোমোটার দেবাশিস বর্মনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, আয়কর দফতরের আধিকারিক সন্দীপন খানের আক্ষেপ, আবাসন করতে হলে কতটা ছাড় দিতে হবে, আইনে তা লেখা রয়েছে। তা দেখার দায়িত্ব পুরসভার। যদিও নিয়ম ভেঙে বহুতল তৈরির ট্র্যাডিশন বাম জমানা থেকেই চলছে।