ছেলেটা গায়ে হাত তুলবে ভাবিনি।
কালো টি-শার্ট পরা যে ছেলেটা বুধবার আমাকে ঘুষি মারছিল, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১০ বার একই রকম উদ্ধত ভঙ্গিতে আমার দিকে তেড়ে এসেছে। মারতে উদ্যত হয়েছে। খারাপ কথা বলেছে। জামার কলার ধরে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু মারধর করেনি। বুধবার ও সীমা ছাড়াল। আমার অপরাধ, ওদের মতাদর্শে বিশ্বাস করি না।
কলেজে পড়াচ্ছি ২৫ বছর হয়ে গেল। ২০০৮ সালে নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে যোগ দিই। সুনামের সঙ্গে পড়াই। ২০১৭ সালে এই কলেজে এমএ পাঠ্যক্রম শুরু হয়। এর কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব আমার কাঁধে। পড়ুয়ারা আমার সন্তানসম। পড়ানো, কলেজ প্রশাসনের কাজ— সব মিলিয়ে ওদের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করি। কিন্তু বুধবার যা ঘটল, অকল্পনীয়।
যে ছেলেমেয়েগুলো হামলা চালাল, তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নামাবলি গায়ে চাপিয়ে গুন্ডামি করছে। ওদের মতাদর্শে বিশ্বাস করি না। তাই, ২০১১ সাল থেকেই আমি এবং কয়েক জন সহকর্মী ওদের লক্ষ্য। ২০১১, ’১২, ’১৩, ’১৪ সালে আক্রান্ত হওয়ার ভয় পেয়েছি। দুই সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করা হয়েছে। এ বার কলেজের গেটের সামনে আমাকে মারা হবে, ভাবিনি। শিক্ষকের গায়ে যে হাত তোলা উচিত নয়, এটা ওদের কে বলবে! আমার ধারণা, ওদের দলও এই জিনিস অনুমোদন করে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই। যারা এই কাজ করে, তারা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হতে পারে না। এমন ঘটনা ঘটানোর রসদ, প্রশ্রয় ওরা কোথায় পাচ্ছে, আপনারা অনুসন্ধান করুন। কেন মারবে আমাকে? দায়িত্ব পালন করি না? পড়াই না?
আমি কলেজ শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) দক্ষিণ হুগলি জেলা কমিটির সম্পাদক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিও ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু কোনও শিক্ষকের সঙ্গে ঝগড়া করার কথাও মাথায় আসেনি কোনও দিন। কোন শিক্ষক কোন রাজনীতি করেন, তা নিয়েও ভাবিনি। ওদের নেতা রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় আমাদের শিক্ষক ছিলেন। উনি বলতে পারবেন, আমাদের ব্যবহার কেমন ছিল। এখন উল্টোটা হচ্ছে।
বুধবার ওদের সঙ্গে আমার কোনও গোলমাল হয়নি। ছাত্রীদের দু’পক্ষের গোলমাল হয়েছিল। এক ছাত্রীকে চড় মারা হয়। তার প্রতিবাদ করেছিলাম। এটাই আমার অপরাধ! সেই গোলমাল তো মিটেও গিয়েছিল! তার পরেও কলেজ থেকে বেরোতেই কয়েক জন ছুটে এসে আমাকে নিগ্রহ করে। ক্যামেরার সামনে ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো মিথ্যা অভিযোগে আমাকেই ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতো।
ঘটনার জেরে আমার স্ত্রী-মেয়ে আতঙ্কিত। আমিও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। বুধবার সারারাত ঘুমোতে পারিনি। যতটা না শারীরিক যন্ত্রণায়, তার থেকে ঢের বেশি মানসিক কষ্টে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। তবে, আমি কলেজে যাব। ছাত্রছাত্রীদের সুশিক্ষিত করে তোলাই আমার কাজ। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে কোনও ত্রুটি নেই। কলেজের দেড় হাজার ছাত্রছাত্রীর আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। ছাত্রীরাই মারের হাত থেকে আমাকে বুধবার রক্ষা করেছে। ঘটনার পর থেকে অনেকে আমার খোঁজ নিচ্ছেন। প্রতিবেশীরা
বাড়িতে আসছেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বহু মানুষ আছেন। তাঁদের জন্য মানসিক শক্তি পাচ্ছি।