তৃণমূলের প্রতিবাদ রিষড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর দে
কেন্দ্রের কৃষি বিল নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলনে দেশ উত্তাল। কাল, শুক্রবার দেশ জুড়ে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে দুই জেলাতেও। অবরোধে শামিল হবে কংগ্রেস।হাওড়ায় অবরোধ কর্মসূচিটি হবে উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে। এখানে মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে। বেলা ৩টে থেকে এক ঘণ্টা মুম্বই রোড অবরোধ করা হবে বলে জেলা বামফ্রন্টের নেতারা জানান। তাঁদের বক্তব্য, এই কর্মসূচি খাতায়-কলমে এক ঘণ্টার হলেও পরিস্থিতি বুঝে মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে জেলা জুড়ে প্রচার তুঙ্গে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রচার-সভা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভালই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘কৃষক ও জনসাধারণের স্বার্থ বিরোধী কৃষি বিলের বিরোধিতা করে আমরা অনেক আগে থেকে জেলার বিভিন্ন ব্লকে আন্দোলন করেছি। এ বারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে দেশজুড়ে যে জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি হবে তাতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই। গায়ের জোরে সংসদে বিল পাশ করা হলেও কেন্দ্রকে তা কার্যকর করতে দেব না। জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করে আমরা সে কথা কেন্দ্রকে বুঝিয়ে দেব।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুনীল আদক বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে শামিল হতে আমাদের ডাকা হয়েছে। আমরা যোগ দেব।’’গ্রামীণ জেলা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু এটি জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি, তাই পুরো পরিস্থিতির উপরে বাড়তি নজর রাখা হবে। এ ছাডা, আর কিছু আগাম পরিকল্পনা করা হয়নি।
হুগলিতে রাজ্য সড়কও অবরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বামনেতারা। হবে পথসভাও। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের কৃষি ও খেতমজুর সমিতি এবং আদিবাসী অধিকার মঞ্চের তরফে বুধবার বিকেল থেকেই পথসভা ও মোমবাতি-মিছিল শুরু হয়ে যায়। সিপিএমের কৃষকসভা ও খেতমজুর সমিতির ডাকে হুগলিতে কাল মোট তিন জায়গায় বড় জমায়েত হবে। সিপিএমের জেলা কৃষি ও খেতমজুর সমিতির সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পান্ডুয়ার জিটি রোড ও তেলিপাড়া মোড়ের সংযোগস্থল, আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড এবং সিঙ্গুরের রতনপুর মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জমায়েত ও অবরোধ কর্মসূচি হবে।’’
সিপিএম নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শহর ও গ্রামীণ এলাকাকে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় হবে জমায়েত ও অবরোধ। শহরাঞ্চলে পথসভা। মাথায় রাখতে হবে, তৃণমূল এখন কৃষি বিলের বিরোধিতা করছে। কিন্তু এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে বিধানসভায় কৃষি বিপণন আইন সংস্কার করে কৃষিপণ্য ও কৃষির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে পুঁজিপতিদের কাছে এই রাজ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রীই।’’চাঁপদানির বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘জেলা কংগ্রেসের তরফে সিপিএমের সঙ্গে বৈদ্যবাটী-সহ বিভিন্ন প্রান্তে অবরোধ ও পথসভার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’ ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় সড়ক অরবোধ করব।’’
সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী বলেন, ‘‘ধনেখালি স্টেশন বাজার এলাকায় আমাদের পথসভা এবং মোমবাতি মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমপানে এবং করোনায় কৃষিনির্ভর মানুষেরা নিদারুণ কষ্টে আছেন। আমরা বারে বারে পোলবা, ধনেখালি, পান্ডুয়া ও বলাগড়ের বিডিও এবং জেলাশাসককে তাঁদের ঋণমুক্তির জন্য আন্দোলন করেছি। না রাজ্য, না কেন্দ্র কেউই গরিব কৃষিনির্ভর মানুষের জন্য এগিয়ে আসেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বড় বড় শিল্পপতিদের ঋণমুক্তির আবেদন কার্যকর করেছে। তার প্রতিবাদেই আমাদের লড়াই।’’