সোমবার শেওড়াফুলি জিআরপি থানার পক্ষ থেকে স্টেশন চত্বর স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
প্ল্যাটফর্মগুলিতে গোল দাগ কাটা হয়েছে।
স্টেশন চত্বর, কারশেডে দাঁড়ানো ট্রেনগুলিকে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে।
ব্যান্ডেল স্টেশনে ঢোকার দু’টি পথ ‘সিল’ করা হয়েছে। চুঁচুড়া, পান্ডুয়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, কোন্নগর, রিষড়া, উত্তরপাড়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনেও এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রাত ফুরোলেই চালু হচ্ছে লোকাল ট্রেন। করোনা আবহে কয়েক মাস বিরতির পরে ফের ট্রেন চালু নিয়ে রেলের তরফে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। অফিসের ব্যস্ত সময়ে ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত কার্যত অলিখিত নিয়ম ছিল। কিন্তু, করোনা-পর্বে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সংক্রমণ এড়ানোর প্রধান শর্ত।
ফলে, বিশেষত অফিসের সময়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা রেল কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখায় স্বাভাবিক সময়ে যত ট্রেন চলত, আপাতত দিনের ব্যস্ত সময়ে তার ৮৪% চালানো হবে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংখ্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
রেল সূত্রের খবর, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য প্ল্যাটফর্মে গোল দাগ কাটার পাশাপাশি স্টেশনে ঢোকার বাড়তি পথ সিল করে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার রেল পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটি পথ দিয়ে ঢুকলে-বেরোলে দূরত্ববিধি রক্ষা সহজ হবে। ভিড় সামলাতে বড় স্টেশনে জিআরপি-আরপিএফের ১২-১৪ জন কর্মী থাকবেন।’’
রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের করোনা বিধি নিয়ে সচেতন করতে রেলপুলিশ সোমবার হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করে। লকডাউন-পর্বের হিসেব কষে যাত্রীদের মাসিক বা ত্রৈমাসিক টিকিটের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার পর্ব চলে বিভিন্ন স্টেশনে। এই কাজে বৈদ্যবাটী স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের লাইন পড়ে। স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের হাতে স্যানিটাইজ়ার ঢেলে দেওয়া হয়। কোনও যাত্রী অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার আর্জি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে শেওড়াফুলি জিআরপি সূত্রে খবর।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর ডিভিশনে আপ-ডাউন মিলিয়ে ৮১ জোড়া ট্রেন চলবে। স্টেশনে মাসিক টিকিট কাটার ভিড় এ দিন তেমন ছিল না। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘মাসিক টিকিটের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া রেল শুরু করেছে। এ জন্য কাউন্টারে আসতে হবে না।’’
রেল জানিয়েছে, দৈনিক টিকিটের জন্য কাউন্টারে দাঁড়ানোর সময় যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পুলিশি ব্যবস্থাও থাকবে। ট্রেনে ওঠানামার সময়েও রেল পুলিশ নজর রাখবে।
এ দিকে, স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর সময়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলেছে যাত্রী সংগঠন ‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে (হাওড়া-জকপুর) প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের সভাপতি অজয় দলুই বলেন, ‘‘ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ায় ৩০ সেকেন্ড। করোনা পরিস্থিতিতে এই স্বল্প সময়ে সবাই যাতে হুড়মুড়িয়ে ওঠানামা না করেন, সে জন্য ট্রেন এক মিনিট দাঁড় করাতে হবে। ডাউন ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, বাগনান স্টেশনের সামনে থেকে বাস চলে। করোনা আবহে বাসের ভাড়া অনেক বেড়েছে। ফলে, বাসের বহু যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করবেন। তাই, ভিড় এড়াতে ওই স্টেশন থেকে কিছু ট্রেন চালাতে হবে। এই দাবিতে তাঁরা খড়্গপুরের ডিআরএমকে চিঠি দিয়েছেন বলে অজয়বাবু জানান।
মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ‘‘যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখে সব দিক বিবেচনা করেই ট্রেন চালানো হবে। এ নিয়ে পর্যালোচনাও চলবে।’’