তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে চড়াপাঁচলায়
Poster

দুর্নীতি, নেতার বিরুদ্ধে পোস্টার

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের আঁচে পুড়ছে হাওড়া জেলা তৃণমূলের অন্দরমহল।

Advertisement

সুব্রত জানা

পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০২:২০
Share:

এই পোস্টার মারা হয়েছে চড়াপাঁচলা পঞ্চায়েতের হালদারপাড়ায়। — নিজস্ব িচত্র

এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আমপান ক্ষতিপূরণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ বার পোস্টার পড়ল পাঁচলার চড়াপাঁচলা পঞ্চায়েতের হালদারপাড়ায়। যার জেরে সামনে এল ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলও।

Advertisement

পোস্টারে ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা সুতপা দাসের অনুগামী নেতা জহুর আলমকেই নিশানা করা হয়েছে। তাতে জহুরের ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয় ন’জনের নাম রয়েছে ‘ভুয়ো ক্ষতিপূরণ-প্রাপক’ হিসেবে। পোস্টারে লেখা, ‘এরা এই ভাবে সিপিএমকে শেষ করেছে, এ বার এসেছে তৃণমূলকে শেষ করতে...’।

ওই পোস্টার কারা সাঁটিয়েছে, তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে, গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, এ কাজ তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর লোকজনের। ২০১৬ সালে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসা জহুরও দাবি করেছেন, ‘‘দলের অঞ্চল সভাপতি আসরাফ হোসেন বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলকে কলঙ্কিত করতে পরিকল্পিত ভাবে এমন মিথ্যা প্রচার করছেন। আমি বা পরিবারের কেউ ক্ষতিপূরণের কোনও আবেদন করিনি। ক্ষতিপূরণও পাইনি।’’ পক্ষান্তরে, আসরাফের পাল্টা দাবি, ‘‘পোস্টার মারার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। এই কাজটি করেছেন এলাকার কিছু যুবক।’’

Advertisement

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের আঁচে পুড়ছে হাওড়া জেলা তৃণমূলের অন্দরমহল। এর জেরে জেলার দুই মন্ত্রী অরূপ রায় এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঠান্ডা লড়াই’ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। তাঁদের মতে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাঘব-বোয়ালদের না-ধরে চুনোপুঁটিদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে পরোক্ষে অরূপবাবুকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজীব। তাঁর মন্তব্য দলের অন্দরে চোরাস্রোত আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।

এই পরিস্থিতিতে এ বার চড়াপাঁচলায় শাসকদলের কোন্দল প্রকাশ্যে এল। তৃণমূলের একাংশেরই অভিযোগ, চড়াপাঁচলা এলাকার বেশ কয়েকজন নেতা প্রভাব খাটিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা লুট করেছেন। এমন অনেককে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের দোতলা-তিনতলা বাড়ি রয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা।

ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা সুতপা দাসের গোষ্ঠীর সঙ্গে দলে তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত আসরাফ-অনুগামীদের বিরোধ চরমে উঠেছে। তার জেরেই ওই পোস্টার বলে মনে করছেন অনেকে। আসরাফ নিজে সুতপাদেবীর বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তবে, সুতপার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন আসরাফের অনুগামী মুসিবর রহমান। মুসিবরের দাবি, ‘‘আমপানে ঘর ভেঙেছে। কোনও রকমে ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছি। পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে দু’বার আবেদন করেও ক্ষতিপূরণ পাইনি। পঞ্চায়েত সদস্যা তাঁর পছন্দের লোকজনকে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।’’

এ নিয়ে সুতপাদেবী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ময়দানে নেমেছেন তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সুতপাকে কোণঠাসা করতে মিথ্যা প্রচার করছেন আসরাফ। বিরোধীদের সঙ্গে মিলে যড়যন্ত্র করে দলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। এখন ক্ষতিপূরণের যাবতীয় আবেদনের তদন্ত করছে টাস্ক ফোর্স। এতে পঞ্চায়েতের কোনও ভূমিকা নেই।’’

দুর্নীতি নিয়ে দলের দুই গোষ্ঠীর চাপান-উতোরে ক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত প্রধান হেমন্ত রায়। তিনি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement