বেআইনি: শাখাভাঙাতে চোলাইয়ের ভাটি। ছবি: সুব্রত জানা
ঝলসে গিয়েছে একের পর এক গাছ।
বহু পুকুরের জল কালো। কেউ ব্যবহার করেন না।
উলুবেড়িয়ার মদাই, ধুলাসিমলা এবং শাখাভাঙা গ্রামে গেলেই দেখা যায় এ দৃশ্য। আর নাকে আসে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ।
হাওড়া জেলায় বেশির ভাগ চোলাই জোগান দেয় পাশাপাশি ওই তিন গ্রাম। বড় বড় গাছের নীচে উনুন জ্বালিয়ে তৈরি হয় চোলাই। সেই আগুন-ধোঁয়ায় ঝলসে যায় গাছ। আর চোলাই তৈরির পরে অবশিষ্ট যে তরল থাকে, তা ঢেলে দেওয়া হয় পুকুরে। তাই পুকুরের জল কালো। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই বেআইনি কারবার।
চোলাই ভাটি রয়েছে উলুবেড়িয়ার আমতলা, সোমরুক, বোয়ালিয়া এবং সুন্দরপুরের মতো গ্রামেও। তবে, গ্রামবাসীদের চাপে এবং পুলিশ ও আবগারি দফতরের বারবার অভিযানে ওই গ্রামগুলিতে ভাটির সংখ্যা আগেকর চেয়ে অনেক কমেছে। কিন্তু বাগে আনা যায়নি মদাই, ধুলাশিমলা বা শাখাভাঙার ভাটি। কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নেই সামনে এসেছে পুলিশ ও আবগারি দফতরের চাপান-উতোর। তিনটি গ্রামে পঞ্চাশেরও বেশি চোলাই ভাটি রয়েছে। শতাধিক পরিবার ওই কারবারের সঙ্গে জড়িত। অভিযান চালানো হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কার কথা মানছে পুলিশ ও আবগারি দফতর—দুই বিভাগই। কিন্তু তার উপরেও রয়েছে দুই বিভাগের সমন্বয়ের অভাব।
পুলিশের দাবি, গ্রাম তিনটি দুর্গম এলাকায়। অভিযান চালালে নদীপথে জ্যারিকেন ভর্তি চোলাই নিয়ে কারবারিরা পালায়। এ ছাড়া আবগারি দফতরের কর্তাদের একাংশের সঙ্গে ‘গোপন বোঝাপড়া’র অভিযোগও তুলেছেন জেলা পুলিশের কিছু কর্তা। পক্ষান্তরে, আবগারি দফতর পাল্টা একই অভিযোগ তুলেছে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে।
পুলিশকে সঙ্গে না নিয়ে মাস দুই আগে আবগারি দফতর মদাই এবং শাখাভাঙায় অভিযান চালায়। প্রচুর জ্যারিকেন ভর্তি চোলাই এবং ভেলিগুড় (মদ তৈরিতে লাগে) বাজেয়াপ্ত করে নৌকায় তুলে নেন দফতরের কর্তারা। তার পরেই বহু গ্রামবাসী ঘিরে ধরে ওই কর্তাদের কাছ থেকে ভেলিগুড়, জ্যারিকেন কেড়ে নেন। আবগারি কর্তাদের অভিযোগ ছিল, আক্রান্ত হয়ে বার বার ফোন করা সত্ত্বেও পুলিশ আসেনি। তাঁদের সন্দেহ, সে দিন পুলিশেরই একাংশ গ্রামবাসীদের প্ররোচিত করেছিল।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পুলিশকর্তাদের একাংশ দাবি করেন, তাঁদের না-জানিয়ে চোলাই কারবারিদের সঙ্গে রফা করার জন্যই একক ভাবে অভিযানে গিয়েছিলেন আবগারি দফতরের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিপাকে পড়লে পুলিশই তাঁদের উদ্ধার করে। বিষয়টি গড়ায় অনেক দূর পর্যন্ত।
তবে, দুই বিভাগই রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ তুলছে। তিনটি এলাকায় ভাটির রমরমার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে, কারবারিদের মদত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তাঁরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ধুলাসিমলা পঞ্চায়তের উপপ্রধান গোপী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক পরিবার এই কারবারে জড়িত। ওঁরা আর্থিক পুনর্বাসন চাইছেন। কী ভাবে ওঁদের চোলাই কারবার থেকে সরানো যায়, তা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি।’’
এখন দেখার, কবে তিন গ্রামের এই বেআইনি কারবার বন্ধ হয়।