প্রতীকী ছবি।
মামলার পাহাড় জমছে। অথচ, ১৫ মাস ধরে বিচারকই নেই উলুবেড়িয়া মহকুমা পকসো (প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আদালতে। ফলে, বিচার পাওয়া থেকে বহু নাবালিক-নাবালিকা বঞ্চিত হচ্ছে। বহু মামলার চূড়ান্ত শুনানি আটকে রয়েছে। অনেক মামলার চার্জগঠন হচ্ছে না।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো সাক্ষ্য দিতে এসে নির্যাতিত নাবালক-নাবালিকারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেইমতো ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে সাজানো হয়েছে হাওড়া পকসো আদালতের এজলাস। কিন্তু জেলার আর এক পকসো আদালতে বিচারকই নেই।
গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অপরাধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশাসিক আলোচনায় (ক্রাইম কনফারেন্স) উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের পকসো আদালতে বিচারক না-থাকার সমস্যার কথা বলা হয়। পকসো মামলায় নাবালিকা নিজে সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু শুনানিতে দেরি হওয়ায় নাবালিকারা ঘটনাক্রম বা তার খুঁটিনাটি বিস্মৃত হতে পারে। ফলে, সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে তারা ভুল করে ফেলতে পারে। নাবালিকা এবং তাদের অভিভাবকদের একাংশ বিচার প্রক্রিয়ার উপরে আস্থাও হারিয়ে ফেলতে পারেন।
হাওড়া জেলা আদালতের প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় এক মাস আগে উলুবেড়িয়া পকসো আদালতে বিচারক নিয়োগ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁকে হাইকোর্টের তরফ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
নাবালক- নাবালিকাদের উপরে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহের বিচারের জন্যই রাজ্যের প্রায় প্রতিটি আদালতে করা হয়েছে পকসো আদালত। উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতেও পকসো আদালত চালু হয় ২০১৬ সালে। উলুবেড়িয়া মহকুমার অধীন বাগনান, আমতা, উদয়নারায়ণপুর, জয়পুর, শ্যামপুর, বাউড়িয়া, উলুবেড়িয়া এবং রাজাপুর— এই আটটি থানা থেকে আসা অভিযোগের বিচার হয় এখানে। প্রতিটি থানা মিলিয়ে মাসে গড়ে প্রায় ১০টি করে নতুন মামলা আসে পকসো আদালতে। তার উপরে আছে পুরনো মামলা।
গত বছরের ২২ জুন উলুবেড়িয়া মহকুমা পকসো আদালতের বিচারক বদলি হয়ে যান। তারপর আর নিয়োগ হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় চারশো মামলা জমে আছে এই আদালতে। প্রতিটি মামলার শুনানি আটকে আছে বিচারকের অভাবে।
কাজ চালানোর জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২)-কে এই আদালতের আংশিক দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র ধৃতদের জামিনের শুনানিটুকু করেন। তা-ও তিনি নিজের এজলাসের কাজ সামলে তবেই পকসো আদালতের কাজ করেন। ফলে, সকলের জামিনের শুনানিও সময়াভাবে দিনের দিন করা যায় না বলে অভিযোগ। এই আদালতের আইনজীবীদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, শুনানি আটকে যাওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এতে দোষীরা যেমন শাস্তি পাচ্ছে না, অন্যদিকে বহু নির্দোষকে হাজতবাস করতে হচ্ছে।