দোকানে অবাধে চলছে পলিথিন। আরামাবাগে মোহন দাসের ছবি।
নিজেদের ‘নির্মল পুরসভা’ ঘোষণা করে গত ১০ সেপ্টেম্বর তার সাফল্য উদযাপন করেছে আরামবাগ পুরসভা। বিভিন্ন সময় প্লাস্টিক-পলিথিন বিরোধী প্রচারও চালিয়েছে কয়েকটি পুরসভা। কিন্তু তার পরেও গোটা হুগলি জেলা জুড়ে প্লাস্টিক-পলিথিনের রমরমা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং পরিবেশ দূযণ তো বটেই, জেলার বেশিরভাগ পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হতে বসেছে পলিথিনের কারণে। অবিলম্বে প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নিকাশির ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছেন পুরকর্মীদের একাংশ।
আরামবাগ থেকে শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া, চন্দননগর—সব মহকুমা শহরের বাসিন্দাদের একই অভিযোগ, প্লাস্টিক দূষণের মতো বিষয়কে পুরসভাগুলি একেবারেই গুরুত্ব দেয় না। যার জন্য গত বছর নভেম্বর মাসে এ নিয়ে মাইকে প্রচার চালিয়ে জরিমানা আদায়ের হুমকি দেওয়া হলেও তা আজ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি। নজরদারির গাফিলতিতেই প্লাস্টিক দূষণ ক্রমশ বাড়ছে।
জেলার ১৪টি পুরসভার সবকটিই শাসকদলের দখলে। এই অবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরাসরি সরকারি ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জেলার বাসিন্দাদের একাংশ। তবে প্লাস্টিক দূষণ রোধে তাঁদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ বিভিন্ন পুরসভার প্রধানেরা। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, পুরসভাগুলি এ সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু সাধারণ মানুষই সচেতন নন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তো জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে তা হলে! এর কোনও উত্তর অবশ্য মেলেনি তাঁদের কাছে।
শহরে প্লাস্টিক দূষণের কথা স্বীকার করে আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “প্লাস্টিক-পলিথিনের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে পুরবাসীদেরও এর দূষণ নিয়ে সচেতন করা হবে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।’’
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার প্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে তাঁরা নিয়মিত প্রচার চালান। দোকানে দোকানে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের জন্য অভিযান চালানো হয়। নাগরিকদের যে এ নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত, সেই সুর শোনা গিয়েছে তাঁর গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘শুধু প্লাস্টিক নয়, বর্তমানে থার্মোকলের থালা, গ্লাস, বাটি ব্যবহারের পর নালায় ফেলে দেওয়ার ফলে নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। এ সব নিয়েও পুরসভার পক্ষ থেকে সচেতনতা শিবির করা হয়।’’
বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান অরিজিতা শীলের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা পেতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই।’’ তাঁর অভিযোগের আঙুলও সাধারণ মানুষের দিকেই। শ্রীরামপুর পুরসভার জঞ্জাল সাফাই দফতরের আধিকারিক গৌরমোহন দে বলেন, ‘‘সচতনতা শিবির হচ্ছে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে লোকজন যেখানে সেখানে প্লাস্টিক, পলিথিনের প্যাকেট ফেলছেন।’’
তবে পুরসভার এমন যুক্তিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন কেউ কেউ। চন্দননগর বাগবাজারের বাসিন্দা গৃহবধূ অরুণিমা সেনের কথায়, ‘‘শাস্তি বা জরিমানা যথাযথ হলে পলিথিনের রমরমা ঠিক কমবে। তবে এ নিয়ে পুরসভার সদিচ্ছা কতটা সেটা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ এখন তো সব কিছুতেই রাজনীতির গন্ধ।’’ আরামবাগ লিঙ্করোডের ধারে বাড়ি কল্লোল দাসের। এই সরকারি কর্মীর কথায়, ‘‘প্লাস্টিক, পলিথিন নালার মুখে জমে যে কী অবস্থা হয় ফি বর্ষায় তা হাড়ে হাড়ে টের পাই। পলিথিন ব্যবহারে কড়া শাস্তি বা জরিমানা না হলে এ সব বন্ধ করা যাবে না।’’
তবে বিভিন্ন পুর এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, বাজার ও বিভিন্ন দোকানগুলি থেকে ক্রেতাদের দেদার মালপত্র দেওয়া হচ্ছে পলিথিনে। কগজের ঠোঙা নেই কেন প্রশ্ন করায় শুনতে হয়েছে, ‘‘ক্রেতা দোকানে এসে পলিথিনের প্যাকেট চায়। না দিলে ঝামেলা করে।’’ শ্রীরামপুর স্টেশন বাজারের এক দোকানি অবশ্য পলিথিন আটকাতে জরিমানার পক্ষে। তিনি জানান, এতে তাঁরা যেমন রোজের ঝামেলা থেকে বাঁচবেন, তেমন শহরেও প্লাস্টিক দূষণ কমবে।
এখন দেখার পলিথিন রুখতে শহরবাসী ও ব্যবসায়ীদের এই মতকে কতটা হাতিয়ার করে পুরসভাগুলি।