মনোজ উপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এক ঘণ্টার জন্য হলেও ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুনের ঘটনা মিলিয়ে দিল সব দলকে!
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে মানুষটি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁকে খুনের মূল চক্রীদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ভদ্রেশ্বর থানার সামনে অবরোধ করেন কয়েক হাজার মানুষ। দলীয় পতাকা ছাড়াই সেই ভিড়ে সামিল হন তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস— সব দলের সমর্থকেরাই।
খুনের পর কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নতুন করে মনোজ খুনের ঘটনায় আর কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে রাজু সাউ নামে এক নির্দল কাউন্সিলরের। মনোজের দাদা অনিলবাবু বুধবার চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতীর নামে এফআইআর করেছিলেন। বৃহস্পতিবার মনোজের আর এক দাদা সুনীলবাবু ওই কাউন্সিলরের নামে এফআইআর করেন। মনোজ খুনের ঘটনায় একমাত্র ধৃত মুন্না রায়কে এ দিন চন্দননগর আদালতের এসিজেএম জয়শঙ্কর রায়ের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১৩ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে জানান, ধৃতকে জেরা করে খুনের কিনারা এবং বাকি দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা হচ্ছে।
দুর্নীতি রোধ করতে চাওয়ার জন্যই যে মনোজকে খুন হতে হল, এ দিন বারবার সে কথাই তুলছিলেন অবরোধকারীরা। শাসকদলের একাংশেরও ধারণা, চিরাচরিত নানা ‘ব্যবস্থা’র মূলে কুঠারাঘাত করতে চাওয়াই কাল হল মনোজের।
কী করেছিলেন মনোজ?
উপ-পুরপ্রধান প্রলয় চক্রবর্তী জানান, অনেক জায়গায় নির্মাণ প্রকল্পে সুবিধার জন্য এলাকার কেউকেটাকে ‘নজরানা’ দিতে হয় প্রোমোটারকে। এটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ‘দাদা’ (মনোজ)। তাঁর কথায়, ‘‘দাদা বলতেন, এতে দুষ্কৃতীরা মদত পাবে। সরাসরি প্রোমোটার, ঠিকাদার-সহ সব পক্ষকে ডেকে উনি বৈঠকে বলেছিলেন, ভদ্রেশ্বরে এ সব চলবে না। ই-টেন্ডারে সব কাজ করাচ্ছিলেন। ভেঙে দিয়েছিলেন ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট।’’
পুরসভারই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকার বিনিময়ে দলের কেউ যাতে রাস্তায় হকার বসাতে না-পারেন, তার বিরোধিতা করেছিলেন মনোজ। নিকাশি, পানীয় জল বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষকে যাতে কোনও আর্থিক ‘ফাঁদে’ পড়তে না-হয়, সে দিকেও নজর ছিল তাঁর। পর্যাপ্ত টাকা না-পাওয়ায় তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী জেটি তৈরিতে রাজি হননি তিনি। যা জেলা পরিষদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর।
মনোজের উদ্যোগে পুরসভা পরিচালিত অঙ্কুর হাসপাতালের উন্নয়নও অনেক নার্সিংহোম-মালিকের ঘুম কেড়েছিল বলে দাবি মানুষের। পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ওই হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক প্যাথলজি, এক্স-রে চালু হয়েছে। বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসছেন। নামমাত্র শয্যাভাড়ার জন্য রোগীর ভিড়ও হচ্ছে রোজ।
মনোজ তেলেনিপাড়ায় রাস্তা দখল করে থাকা খাটাল সরিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজু-সহ পুরসভার কয়েকজন তার বিরোধিতা করেন বলে খবর। এ নিয়ে মামলা চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই পুরপ্রধান খুনে এখন খাটাল-কাণ্ডের যোগ আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠছে। রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর বাড়ি ছিল তালাবন্ধ। মনোজ-খুনের ঘটনার এনআইএ তদন্ত দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।