প্রতীকী ছবি।
চার-পাঁচশো টাকার বিনিময়ে মাত্র এক ঘণ্টাতেই মিলছে আলিপুর এবং হাওড়া জেলা আদালতের প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা!
উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে চত্বরের এই রমরমা কারবার পুরোপুরি জাল বলে মানছে সেখানকার ক্রিমিন্যাল বার অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠনের অভিযোগ, আদালতেরই এক শ্রেণির ল’ক্লার্ক এবং দু’একজন আইনজীবীর মদতে এই কারবার চলছে। তা ঠেকাতে শুধুমাত্র হলফনামা করানোর জন্য উলুবেড়িয়া আদালতে একজন প্রথম শ্রেণির বিচারককে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন ওই সংগঠনের সভাপতি শেখ মহম্মদ ফরিদ এবং সম্পাদক পীযূষ গুহ। দু’জনেই জানান, এ নিয়ে তাঁরা জেলা বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মহম্মদ ফরিদ বলেন, ‘‘এখানে খুব কম সংখ্যায় হলফনামা করানো হয়। তা বাড়ানো না হলে জাল হলফনামার রমরমা কমবে না। সেই কারণেই শুধুমাত্র হলফনামা করানোর জন্য এখানে একজন প্রথম শ্রেণির বিচারককে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। ’’
বিমা সংস্থার টাকা পেতে, চাকরির প্রয়োজনে, পাসপোর্ট করাতে, জমির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত শংসাপত্র পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা প্রয়োজন হয়। নিয়মানুযায়ী এই হলফনামা পেতে হলে বিচারকের কাছে আবেদনকারীকে হাজির হতে হয়।
সম্প্রতি উলুবেড়িয়া আদালতে চালু হয়েছে প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা করানো। তারপরেও জাল চক্রের রমরমা কমেনি বলে অভিযোগ। আইনজীবীদের দাবি, দশ বছর ধরে এই আদালতে ওই হলফনামার কাজ করানো হত না। ফলে, আদালতের আইনজীবী এবং ল’ক্লার্করা হাওড়া জেলা আদালত এবং আলিপুর আদালত থেকে আবেদনকারীদের হলফনামা করিয়ে আনতেন। সেই ফাঁকেই ঢুকে পড়ে দুষ্টচক্রটি।
এই আদালতের আইনজীবী এবং ল ক্লার্কদের অধিকাংশের বক্তব্য, এখানে ওই হলফনামা করানোর ব্যবস্থা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা কম। দু’জন প্রথম শ্রেণির বিচারককে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচারের কাজ সামলে তাঁরা পালা করে এক-এক জন পনেরো দিন করে হলফনামা দেন। দিনে কুড়ি জনের বেশি আবেদনকারীকে হলফনামা দেওয়া যায় না। দু’শো আবেদনকারীর মধ্যে থেকে যদি ২০ জনের হলফনামা হয়, তখন বাকিদের একটা বড় অংশ পড়ে যান দুষ্টচক্রের খপ্পরে।
জাল হলফনামা জমা দিলে ভোগান্তি বিস্তর। তার হাতে-গরম উদাহরণও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ দ্রুত হলফনামা পাওয়ার আশায় দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এক তরুণী তাঁর শিক্ষক-বাবার মৃত্যুর পরে পেনশনের জন্য জেলা শিক্ষা দফতরে আবেদন জানান। শিক্ষা দফতরে জমা দেওয়া কাগজপত্রের মধ্যে একটি প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামাও ছিল। জেলা শিক্ষা দফতর থেকে ওই কাগজপত্র পাঠানো হয় উলুবেড়িয়া ট্রেজারিতে। সেখানে কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় হলফনামাটি জাল। ওই তরুণী স্বীকার করেন তিনি উলুবেড়িয়া আদালত চত্বর থেকে এক আইনজীবীর সহায়তায় ৪০০ টাকার বিনিময়ে হাওড়া জেলা আদালতের হলফনামাটি সংগ্রহ করেছিলেন। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মহকুমা প্রশাসন কোনও আইনগত ব্যবস্থা না নিলেও তাঁর আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। তিনি এখনও বাবার পেনশন পাননি।
জীবিতকে মৃত দেখিয়ে বিমার টাকা আত্মসাৎ করার একটি মামলাও রুজু হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে। তাতে দেখা যায়, মৃতের উত্তরাধিকারীর নামে একটি প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে জানা যায়, আলিপুর আদালতের নামে করানো এই হলফনামাটিও জাল ছিল।