ভোগান্তি: যানজটে জেরবার আরামবাগের রাস্তা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
বছরভর আরামবাগ শহরের মূল সমস্যা একটাই— যানজট। পাঁচ মিনিটের পথ পেরোতে বেশির ভাগ সময়েই ১৫-২০ মিনিট লেগে যাচ্ছে!
হবে না-ই বা কেন! রাস্তা দখল করে ব্যবসা, ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা, যত্রতত্র পার্কিং— কিছুই বাদ নেই। হাসপাতাল রোড আরামবাগের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। নেতাজি স্কোয়ার থেকে ওই রাস্তায় ঢুকলেই দেখা যায়, সারি সারি দোকান। দোকানের সিঁড়ি হয়েছে রাস্তা ‘দখল’ করে। তার পরেও রাস্তা ‘দখল’ করে ফল, আনাজ-সহ নানা পসরা সাজিয়ে হকারদের রাজত্ব। বিভিন্ন ওষুধের দোকানে অন্তত ৫০ জন চিকিৎসকের ‘চেম্বার’ চলে। সেখানেও রোগীদের গাড়ি-রিকশার ভিড়। ওই রাস্তার গায়েই পুরসভার সুপার মার্কেট। আবার আরামবাগ রেল স্টেশন এবং মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছনোর ওই একটিই রাস্তা। সেখানে ২৪ ঘণ্টাই যানজট। তাতে আটকে থাকে হাসপাতালগামী রোগী এবং চিকিৎসকদের গাড়িও। অন্য রাস্তাগুলিতেও যানজট থেকে মুক্তি নেই। কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অনেকগুলি জেলার যোগাযোগের মূল সড়কটি শহরেও প্রায় তিন কিলোমিটার এসেছে। এখানে রাস্তাটির নাম লিঙ্ক রোড। প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলে। এখানেও চোখে ‘দখলদারি’র চেনা ছবি।
প্রতিদিন পথে বেরিয়ে ওই দুর্ভোগে বিরক্ত শহরের বাসিন্দারা। এ জন্য পুরসভার উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। পুরভোটের মুখে অনেকের মুখেই আগের বাম পুরবোর্ডের শৃঙ্খলার কথাও ফিরছে। তুলনা চলছে বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ডের সঙ্গেও। শহরে যানজট এবং পথ দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যবসায়ী মহল এবং বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চ থেকে কয়েকবার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। পথ অবরোধও হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনও বদল হয়নি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লকপাড়ার এক শিক্ষকের অভিযোগ, “আগে বামফ্রন্টের আমলে যে শৃঙ্খলা ছিল, তা এখন নেই। এখন নেতারা নিজেরাই টাকার বিনিময়ে রাস্তায় হকার বসাচ্ছেন। পুলিশ বা পূর্ত দফতর উচ্ছেদ করতে গেলে তাঁরাই বাধা দিচ্ছেন।” আন্দিমহল্লার বাসিন্দা শেখ রফিক বলেন, “বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তাটি চওড়ায় ১৪ মিটার। তার মধ্যে ট্রলিতে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে হকারদের দখলে থাকে প্রায় ৫ মিটার। যানজটের জেরে পুরো শহর অচল হয়ে যাচ্ছে। বাম আমলে পুরসভার স্বেচ্ছাসেবীরা এ সব তদারক করে যানজট হতে দিতেন না। এখন সে উদ্যোগ কই?’’
যানজট নিয়ে পূর্ত দফতর থেকেও পুরসভার উদাসীনতাকে দায়ী করা হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিকের অভিযোগ, শহর জুড়ে রাস্তায় ট্রলি নিয়ে ব্যবসা চলছে। বালি-পাথর ইত্যাদি ইমারতি দ্রব্য রাখা হচ্ছে। সরাসরি দফতর থেকে সে সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টা পুর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে অনেকবার। পুরসভা কিছু করেনি। পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী অবশ্য দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে হকার বসানোর অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে হকার উচ্ছেদ, বেআইনি পার্কিং এবং রাস্তা দখল করে ইমারতি সামগ্রী রাখা নিয়ে পুরসভা কড়া পদক্ষেপ করছে। বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক বোর্ড দেওয়া হয়েছে। শহরের বেহাল অবস্থা কাটাতে আমরা একটি বাইপাসের জন্যেও রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।”
ভুক্তভোগীদের দাবি, শুধু বোর্ড লাগিয়েই দায় সেরেছে পুরসভা। রাস্তায় নেমে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়ে গিয়েছে শুধু কাগজে-কলমে।