Birds

অবাধেই পাখি ধরা, হুঁশ নেই কারও

হাওড়ার কিছু কিছু এলাকা দিন দিন পাখিদের বধ্যভূমি হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

সুব্রত জানা

আমতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৭
Share:

মরণফাঁদ: জাল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে পাখি(ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র

আদিগন্ত মাঠ। রয়েছে চাষজমি। তার মধ্যে কয়েক ফুট অন্তর বাঁশ পুঁতে লাগানো হয়েছে নাইলনের জাল। আসলে পাখির মরণফাঁদ।

Advertisement

খোলা আকাশে উড়তে উড়তে আমতার কেঁদোর মাঠে এসে সেই মরণফাঁদে আটকে পড়ছে ল্যাপউইগ, মাঠচড়াই, প্লোভারের মতো দেশি-বিদেশি পাখি। তারপরে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অবাধেই চলছে পাখি ধরার কারবার। হুঁশ নেই কারও।

হাওড়ার কিছু কিছু এলাকা দিন দিন পাখিদের বধ্যভূমি হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের নজর নেই, এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে পরিবেশপ্রেমীদের মুখে। উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন পুকুরে খাবারের খোঁজে এসে কত মাছরাঙা এবং পানকৌড়ির যে মৃত্যু হচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই। কারণ, পানকৌড়ি-মাছরাঙার হাত থেকে পুকুর বাঁচাতে মালিকেরা জাল বা সুতো দিয়ে ঘিরে রাখেন পুকুর। তাতেই পাখি এসে আটকে পড়ে। কয়েক মাস আগেই এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজারে। বন দফতর গ্রামে গ্রামে সচেতনতা শিবির করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও ওই প্রবণতা বন্ধ হয়নি।

Advertisement

এ বার খোঁজ মিলল পাখিদের আর এক বধ্যভূমির। উলুবেড়িয়ায় মাছরাঙা-পানকৌড়ি আটকাতে পুকুরের উপরে জাল বিছোন মালিকেরাই। কিন্তু কেঁদোর মাঠে কারা জাল লাগাচ্ছে, তা জানা নেই বলে গ্রামবাসীদের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নামার আগে কিছু লোকজন এসে মাঠে জাল লাগায়। সারারাত মাঠেই থাকে তারা। পরের দিন ভোরে দেখা যায়, জালে আটকে পড়েছে দেখি-বিদেশি পাখি। ওই সব লোকজনের পরিচয় জানতে চাইলে হুমকি শুনতে হয়। এক চাষি বলেন, ‘‘ওদের বহুবার পাখি ধরতে নিষেধ করেছি। শোনেনি। উল্টে ভয় দেখায়।’’

আমতা-১ ব্লকের কেঁদোর মাঠ মূলত কয়েকশো বিঘার ধানজমি। এখানে শীতকালে দেশের নানা প্রান্তের, এমনকি পরিযায়ী পাখিও আসে। শীতের মরসুমে দীর্ঘদিন ধরে ওই তল্লাটে পাখি-চোররা হাজির হয় বলে গ্রামবাসীরা জানান। চাষিরা ছাড়া ওই মাঠে সচরাচর কেউ যান না। ফলে, অবাধেই কাজ সারে পাখি-চোররা।

গ্রামবাসীর কথামতো সোমবার ভোরে ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল, জালে বেশ কিছু পাখি আটকে পড়ে ছটফট করছে। কয়েকজন পাখিগুলিকে জাল থেকে বের করে ডানা দু’টিকে ভেঙে ব্যাগে পুরছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই শুনতে হল হুঙ্কার। তবে পরিচয় গোপন করে তাদের আস্থা অর্জন করে জানা গেল, এক-এখটি পাখি তারা ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করে। এক শ্রেণির মানুষ শীতের মরসুমে এই সব পাখির মাংস দিয়ে চড়ুইভাতি করেন। তাঁরাই ক্রেতা। অবাধে এই বেআইনি কারবার নিয়ে কী বলছে পুলিশ?

আমতা থানা বিষয়টি জানেই না। সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে, তারা খোঁজ নেবে। বন দফতরের জেলা আধিকারিক বিদিশা বসাক অবশ্য জানেন। তিনি বলেন, ‘‘শীঘ্রই ওই এলাকায় সচেতন শিবির করা হবে। নজরদারিও চালানো হবে।’’

পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। উলুবেড়িয়ার চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় খাঁড়া একজন পক্ষীপ্রেমী। তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশ বাঁচানোর জন্য সরকার যখন নানা ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে, তখন সরকারেরই নজরদারির অভাবে এক শ্রেণির মানুষ পাখি-জীবজন্তু নির্বিচারে হত্যা করছে। সরকারের উচিত নজরদারি বাড়ানো এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement