আরামবাগের দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্যমন্দিরের মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মাইক বেজেছে। আলোয় ভেসেছে চারপাশ। বেড়ার ঘেরাটোপ মণ্ডপে মণ্ডপে। তার বাইরেও ভিড় নেই।
হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে উৎসবপ্রিয় বেশির ভাগ মানুষই বৃহস্পতিবার মণ্ডপমুখো হলেন না। জনস্রোত সামলাতে হল না পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। করোনা-কালে এক অন্য ‘মহাষষ্ঠী’ দেখল দুই জেলা।
এর পিছনে নিম্নচাপের ভ্রুকুটিও একটা কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে, পুজোয় বৃষ্টি এ বাংলায় নতুন নয়। সে সব উপেক্ষা করেই মহাষষ্ঠীতে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। কিন্তু এ বার মানুষ বোধনে গৃহকোণেই কাটালেন। রেস্তরাঁগুলিতেও তেমন ভিড় জমেনি।
সকালে হাওড়ার উলুবেড়িয়া বাজারপাড়া স্পোর্টিং অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের মণ্ডপের ১০ মিটার দূরে, ব্যারিকেডের বাইরে টেবিল পেতে বসেছিলেন ক্লাবের এক সদস্য। তিনি পুজো দিতে আসা মানুষজনের কাছ থেকে ফুলমিষ্টি নিয়ে স্যানিটাইজ় করে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন মণ্ডপে। ক্লাবকর্তা অয়ন দে বলেন, ‘‘আদালতের কড়া নির্দেশ রয়েছে। আমরা সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।’’
থিমপুজোর টানে হুগলিতে বেশি ভিড় হয় উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া এবং আরামবাগ শহরে। সেই ভিড় কোথায়! দু’-চার জন করে এসে মণ্ডপের বাইরে থেকে বুড়ি ছোঁয়ার মতো ঠাকুর দেখে চলে যাচ্ছিলেন। কেউ কেউ মোটরবাইকে বসেই মণ্ডপের দিকে তাকিয়ে কপালে হাত ছুঁইয়ে চলে যান।
অন্যান্য বার চুঁচুড়ার অলিগলিতেও থিকথিকে ভিড় থাকে। এ বার কিছু কচিকাঁচাকেই দল বেঁধে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। খাদিনা মোড়ের এক প্রৌঢ় অবশ্য অভ্যাসবশে ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়েছিলেন। ‘অন্য ষষ্ঠী’কে ফ্রেমবন্দি করবেন বলে। শ্রীরামপুরের জগন্নাথ ঘাট লেন (লক্ষ্মীঘাট), মাহেশ কলোনি, নেহেরুনগর কলোনির পুজো উদ্যোক্তারা কার্যত মাছি তাড়িয়েছেন। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, আগামী দু’দিন বৃষ্টি হলে মানুষের বেরনোর প্রবণতা আরও কমবে।
সন্ধে ছ’টায় মাহেশ কলোনি সর্বজনীনের মণ্ডপের সামনে পুজো কমিটির চার-পাঁচ জন সদস্য আড্ডা দিচ্ছেন। কমিটির কর্তা মহাদেব বণিক বলেন, ‘‘অন্য বার ভিড় সামলাতে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করি। এ বার করিনি। আমাদেরও কিছু করতে হবে না। লোকই নেই, সামলাব কাকে!’’
চাঁপদানি, বৈদ্যবাটী ও শেওড়াফুলির কিছু পুজো কমিটি হাইকোর্টের নির্দেশ মানার জন্য মাইকে প্রচার চালিয়েছে। সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের মাস্ক বিতরণ করতে চেয়েও পারছিলেন না আরামবাগের গৌরহাটি মোড়ের দুয়ের পল্লি পুজো কমিটির সম্পাদক সুবীর দে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘একজনও মণ্ডপের ধারেকাছে আসেননি এখনও। মাস্ক দেব কাকে?’’