জলসঙ্কটের শহরে অপচয় বন্ধে নেই উদ্যোগ, ক্ষোভ বাসিন্দাদের

সকাল-সন্ধ্যা রাস্তার কল দিয়ে অনর্গল পড়ে যাচ্ছে পানীয় জল। বন্ধ হবে কী করে? পাইপলাইনের মুখে লাগানো কলটাই যে হাওয়া! দীর্ঘদিন ধরেই এ ছবির সঙ্গে পরিচিত উলুবেড়িয়া শহরের বহু ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু শহরের জলসঙ্কট তো মেটেই না, রাস্তার কলের জলের অপচয়ও বন্ধ হয় না— এমনটাই বলছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে রয়েছে ক্ষোভও।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

এ ভাবেই পড়ে অপচয় হচ্ছে জল। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল-সন্ধ্যা রাস্তার কল দিয়ে অনর্গল পড়ে যাচ্ছে পানীয় জল। বন্ধ হবে কী করে? পাইপলাইনের মুখে লাগানো কলটাই যে হাওয়া!

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরেই এ ছবির সঙ্গে পরিচিত উলুবেড়িয়া শহরের বহু ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু শহরের জলসঙ্কট তো মেটেই না, রাস্তার কলের জলের অপচয়ও বন্ধ হয় না— এমনটাই বলছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে রয়েছে ক্ষোভও। সামনে ফের পুরভোট। নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে সমস্যা মেটাতে কতটা উদ্যোগী হবে, তা নিয়ে বাসিন্দারা সন্দিহান। তবে, শহরের রাস্তায় জলের অপচয় নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

৩২ ওয়ার্ডের ওই পুরসভায় এ পর্যন্ত ২০-২২টি ওয়ার্ডে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের বন্দোবস্ত করতে পেরেছে পুরসভা। বাউড়িয়া, চেঙ্গাইলের মতো কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা নলকূপ বা পুকুরের জল। কারণ, উলুবেড়িয়া জলপ্রকল্প থেকে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা ওই সব এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাইপলাইন নেই। অর্থাভাবেই সেই কাজ করা যায়নি বলে বিদায়ী পুরবোর্ডের কর্তাদের দাবি। ফলে, পর্যাপ্ত জলের জোগানের অভাবে ওই সব এলাকায় হামেশাই গোলমালও হয়।

Advertisement

কিন্তু যে সব ওয়ার্ডে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়, তার মধ্যে ১৩, ১৭-সহ বেশ কিছু ওয়ার্ডে ঘুরলেই চোখে পড়ে রাস্তার কলের ওই অবস্থা। অনর্গল পড়ে যাচ্ছে জল। পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই রাস্তার কলের ওই অবস্থা বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।

সব সময় ওই নজরদারি সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) আকবর শেখ। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময়ে কলের মুখ লাগিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় ছিঁচকে চোর যদি কলের মুখগুলি চুরি করে নিয়ে যায়, আমরা কী করব? সাধারণ মানুষকেই এ নিয়ে সচেতন হতে হবে।’’ একই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার নিখিল মণ্ডলেরও। অবশ্য এ জন্য পরিস্রুত পানীয় জল যে নষ্ট হচ্ছে, সে কথা মেনে নিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই পুরসভার পক্ষ থেকে ট্যাপকলের মুখ লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ছিঁচকে চোরেরা তা চুরি করে নেয়।’’ পুরসভার বর্তমান প্রশাসক, তথা উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় দেড় হাজারেরও বেশি ট্যাপকল রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিনশোরও বেশি ট্যাপকলের মুখ নেই। প্রতিদিন তিন বার করে ৬ ঘণ্টা পুরবাসীদের জন্য জল সরবরাহ করা হয় জলপ্রকল্প থেকে। এ জন্য প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষ গ্যালন জল লাগে। পুরকর্তাদের দাবি, জল উৎপাদন বাবদ ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুরসভা। মাসে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয় এ জন্য। তার উপরে রয়েছে জল পরিস্রুত করার খরচও।

এ ভাবে খরচ করে জল সরবরাহ করা হলেও তা যে ভাবে নষ্ট হচ্ছে তাতে ক্ষুব্ধ বহু বাসিন্দাই। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অজয় সরকারের বাড়িতে পাইপলাইনের সংযোগ না থাকায় পরিস্রুত পানীয় জল যায় না। রাস্তার কল থেকেই তিনি জল নেন। তাঁর কথায়, ‘‘বহুবার পুরসভাকে কলের মুখ যাতে বন্ধ করা হয়, সে জন্য বলেছি। কিন্তু পুরসভা গুরুত্ব দেয়নি।’’

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রাবন্তী মজুমদারের বাড়িতে অবশ্য পাইপলাইনের জল যায়। তা সত্ত্বেও রাস্তায় জলের অপচয় দেখে তিনি ক্ষোভ গোপন রাখেননি। তিনি বলেন, ‘‘যখনই পুরসভায় যাই, কর্তাদের বলার চেষ্টা করি। আমিও মনে করি, কলের মুখ চুরি রুখতে সাধারণ মানুষেরও নজর দেওয়া উচিত।’’

জল অপচয় রুখতে তৃণমূল শাসিত পুরবোর্ড ব্যর্থ বলেই দাবি করছে বিরোধী দলগুলি। বিদায়ী বোর্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তথা এ বারের প্রার্থী পাপিয়া মণ্ডল বলেন, ‘‘এ জন্য বিদায়ী বোর্ড সম্পূর্ণ দায়ী। আমরা বারবার বলেছি। কিন্তু পুরবোর্ড উদ্যোগী হয়নি। বিষয়টি আমরা প্রচারেও তুলব। চুরি রুখতে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’

বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা সিপিএম নেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘এটার জন্য সম্পূর্ণ ভাবেই তৃণমূল বোর্ড দায়ী। আমাদের সময়ে এত বেশি কলের এই অবস্থা হয়নি। আমরা নজরদারি চালাতাম। এই বোর্ড কোনও কিছু দেখে না।’’

সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক চাপান-উতোর নয়, চান স্থায়ী সমাধান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement