‘হাইফ্লো নেজ়াল অক্সিজেনেটর’ যন্ত্রে রোগীর চিকিৎসা চলছে। নিজস্ব চিত্র
কোভিড-মৃত্যুর হার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে চায় রাজ্য সরকার। সেই কারণে সঙ্কটপূর্ণ (ক্রিটিক্যাল) রোগীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাইছে তারা। সেই কাজে নয়া হাতিয়ার ‘হাইফ্লো নেজ়াল অক্সিজেনেটর’।
হুগলি জেলা পরিষদের তরফে বুধবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে ১০টি এমন যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। বুধবার জেলা পরিষদ ভবনে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর হাতে যন্ত্রগুলি তুলে দেন জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমান-সহ অন্যেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রতিটি যন্ত্রের দাম প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই যন্ত্র ভেন্টিলেটরের থেকেও দ্রুত কাজ করে। অনেক সময় কোভিড রোগীর কোনও সমস্যা চোখে ধরা পড়ছে না। কিন্তু অক্সিমিটারে দেখা যাচ্ছে, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে। তখন এই যন্ত্র দ্রুত রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানান, ৮৫% করোনা সংক্রমিত হয় উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। ১৫% সংক্রমিতকে হাসপাতালে ভর্তির করানোর দরকার হয়। তাঁদের মধ্যে ৫% সঙ্কটপূর্ণ হন। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখে ঠিক করা হয়েছে, জেলায় কোভিড হাসপাতালগুলিতে ৭০টির মতো উচ্চ-নির্ভরতাযুক্ত শয্যা তৈরি করা হবে। সেখানে এই যন্ত্র থাকবে।’’ হুগলিতে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী, ব্যান্ডেল ইএসআই এবং আরামবাগের একটি নার্সিংহোমে কোভিড চিকিৎসা চলছে।
ডানকুনির একটি নার্সিংহোমকেও কোভিড-হাসপাতাল করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ৫৩ শয্যার ওই হাসপাতালটি চালু হওয়ার কথা। সেখানে সঙ্কটপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মানছেন, শুরুতে কোভিড-চিকিৎসা নিয়ে তাঁদের ধারণা কম ছিল। উপসর্গ কী, ওষুধ কী দেওয়া উচিত, কেন রোগীর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হচ্ছে, কেন তাঁরা মারা যাচ্ছেন— এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন তাঁরা। সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছে,
এমনটা নয়। এমনও দেখা গিয়েছে, ৯০ বছরের বৃদ্ধ করোনা-মুক্ত হয়েছেন। অথচ, করোনায় মৃত্যু হয়েছে যুবকের। তবে এখন চিকিৎসকদের ধারণা বেড়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, শরীরে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রার একক যেখানে ১০০ থেকে ৯৫, সেখানে কোনও কোনও করোনা-রোগীর তা ৫০, এমনকী, ৪০ এ-ও নেমে যাচ্ছে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসের সমস্যা, বুক ধরফর করা, জিভ-নখ নীল হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
কোভিডের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলেও বাইরে থেকে রোগীকে দেখে তা বোঝা যাচ্ছে না। রোগী শুধু কিছুটা ঝিমিয়ে থাকছেন। হাসপাতালে নিয়ে য়াওয়ার আগে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে কিডনি, লিভার, মস্তিষ্ক বা হার্টের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হলেও পরিমাণে তা পর্যাপ্ত হচ্ছে না। ফলে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলে সেখান থেকে রোগীকে দ্রুত বার করা যাচ্ছে না। এই ধরণের রোগীদের চিকিৎসায় ‘হাইফ্লো নেজ়াল অক্সিজেনেটর’ ফলদায়ক হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
সিএমওএইচ বলেন, ‘‘এই যন্ত্রের মাধ্যমে মিনিটে ৭০০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। এতটা বেশি মাত্রায় অক্সিজেন অন্য কোনও ব্যবস্থায় দেওয়া সম্ভব নয়।’’ শ্রীরামপুর শ্রমজীবীতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি ‘হাইফ্লো নেজ়াল অক্সিজেনেটর’ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের টাকায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে এমন আরও একটি যন্ত্র কেনা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান।