ঘুরপথ: এই রাস্তা পেরিয়েই যাওয়া যাবে পানশালায়। ছবি: সুব্রত জানা
গলা ভেজানোর উপকরণ রয়েছে ১০০ মিটার দূরেই। কিন্তু সেই দূরত্ব পেরোতে সাপ-লুডো খেলার মতো পথ বেয়ে যেতে হবে ৩০০ মিটার রাস্তা। জাতীয় সড়কের পাশে মদ বিক্রি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এড়াতে এমনই এক অভিনব কৌশল নিয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার একটি রিসর্ট।
মাস কয়েক আগে রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের ধারে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও মদের দোকান বা পানাশালা রাখা যাবে না। পঞ্চায়েত এলাকায় সেই দূরত্ব রাখা হয়েছে ৩০০ মিটারের মধ্যে। এই নির্দেশের পরে হাওড়ায় মুম্বই রোডের ধারে অনেক পানশালার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্ত তার মধ্যেই ঘুরপথে মদ বিক্রির ব্যবস্থা করে ফেলেছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের একটি রিসর্ট।
কীভাবে?
মুম্বই রোড থেকে ওই রির্সটটির দূরত্ব মেরেকেটে ১০০ মিটার। কিন্তু সেই দূরত্বকেই ঘুরপথে ৩০০ মিটার করতে তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তা। যার ফলে সেখান থেকে মদ বিক্রিতে আইনগত কোনও বাধা থাকবে না। রাস্তাটিকে এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে জাতীয় সড়ক থেকে ওই রিসর্ট যেতে ৩০০ মিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। ওই রিসর্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, আবগারি দফতরের কর্তারাই ঘুরপথে রাস্তা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে মদের দোকান, পানশালার একটি বড় অংশ জাতীয় বা রাজ্য সড়কের ধারে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে গত কয়েক বছরে একের পর এক ধাবাকে পানশালা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অনশপ বা মদ বিক্রির পাশাপাশি সেখানেই মদ্যপান করা যাবে, এমন লাইসেন্সও দেওয়া হয় বহু দোকানকে। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের রাজস্বের বেশিরভাগই অংশই পানশালা ও মদের দোকান থেকে আসে। তাই আইন বাঁচিয়ে পানশালাগুলি চালু রাখার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে অন্যতম হল রিসর্টের মধ্যে ঘুরপথে রাস্তা তৈরি।
ওই রিসর্টে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পাঁচিলের ভিতরে রিসর্টের ডান দিকে খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে আগে ফুলের বাগান, জলের ফোয়ারা ছিল। বাগান তুলে দেওয়া হয়েছে। ফোয়ারা বন্ধ করা হয়েছে। সেই ফাঁকা জায়গাতেই তৈরি হচ্ছে রাস্তা। বিভিন্ন বাঁক দিয়ে সেই রাস্তা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে মাটি ও বালি ফেলা হচ্ছে। তার পর ১০ ইঞ্চি টাইলস দিয়ে রাস্তাটি সাজানো হচ্ছে। ছোট গাড়ি যাতে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য রাস্তাটি ৫ ফুট চওড়া করা হচ্ছে।
হাওড়া জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তা জানান, অন্যান্য রাজ্য এই ভাবে রাস্তা তৈরি করে অনেক রিসর্ট ও পানশালা চলছে। বীরশিবপুরের ওই রিসর্টের পানশালাটির রাস্তা তৈরি শেষ হলে সেটি পরিদর্শন করে মদ বিক্রির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।