উদ্যোগ: ভাগাড়ে পরিদর্শন পুর-কমিশনারের। ছবি: তাপস ঘোষ
জৈব এবং অজৈব আবর্জনা পৃথক করে তাকে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে হুগলির কয়েকটি শহরে। এ বার এই জেলায় গঙ্গাপাড়ের আর এক শহর চন্দননগরেও এমন প্রকল্প তৈরির চেষ্টা চলছে।
চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই আমরা কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাইছি। পরিকল্পনা রচনার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।’’ বিষয়টি নিয়ে বুধবার পুরসভায় বৈঠকের পাশাপাশি প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা ঘুরেও দেখেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি।
চন্দননগরে আবর্জনা সাফাই নিয়ে সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ রয়েছে। জঞ্জাল অপসারণে এখানে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি বলে পুর-কর্তৃপক্ষ মানছেন। পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কলুপুকুর এলাকায় ভাগাড়ে শহরের যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জঞ্জাল ফেলায় এখানে আবর্জনার পাহাড় হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, এখান থেকে দুর্গন্ধ এবং দূষণ ছড়ায়। তার ফলে, বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন।
পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই আবর্জনা সাফাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছিল। বছর খানেক ধরে বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা বাড়ে। যা পরিকল্পনা হয়েছে, তাতে ভাগাড়ের সাড়ে পনেরো বিঘা জমিতে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের প্রধান ইউনিট গড়া হবে। ভাগাড়ের পাহাড়প্রমাণ আবর্জনা পুরো সাফ করে ফেলা হবে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট কয়েকটি ইউনিট তৈরি করা হবে। বাড়ি বাড়ি জৈব এবং অজৈব আবর্জনা পৃথক করে সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে। সেই আবর্জনা নির্দিষ্ট ইউনিটে পাঠানো হবে। জৈব আবর্জনা থেকে সার তৈরি করা হবে। ক্যারিব্যাগ-সহ প্লাস্টিকজাত বিভিন্ন সামগ্রী পৃথক করে তা বিক্রি করা হবে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশে ওইসব প্লাস্টিকের জিনিস ফিরিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
পুরসভার আধিকারিকরা জানান, প্লাস্টিকের জিনিস পৃথকীকরণের কাজের জন্য কেএমডিএ পার্কের পিছনে পুরসভার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে একটি ইউনিট তৈরি করা হবে। প্রকল্পের কাজে কাগজ কুড়ানিদের লাগানো হবে। এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে তাঁদের স্থায়ী রোজগার হবে। ফলে, এই প্রকল্পে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ একটি সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে বুধবার দুপুরে পুরভবনে আলোচনা করেন পুর-কমিশনার। তার পরে প্রস্তাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা। স্বপনবাবু জানান, ভাগাড় চত্বর সাফ করে ঝকঝকে করে ফেলা হবে। এখানে একদিকে আধুনিক ওই প্রকল্প গড়া হবে। বাকি অংশে পার্ক তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গোটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। তখন একটুও দুর্গন্ধ থাকবে না। মানুষ নিশ্চিন্তে পার্কে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তর ব্যবহারে এলাকার চেহারাটাই বদলে দেওয়া যাবে।’’ গোটা প্রকল্পে আনুমানিক কত খরচ হবে, তার হিসেব চলছে বলে পুর-কমিশনার জানান।