মেঝেতে রক্তের দাগ।
বিসর্জনের আগে ক্লাবের পুজো মণ্ডপের পিছনে দাঁড়িয়ে মদ্যপান করছিলেন এলাকারই কয়েক জন যুবক। তা দেখে প্রতিবাদ করেন ক্লাবের এক সদস্য। মত্ত যুবকদের সঙ্গে বচসা এবং ধাক্কাধাক্কি হয় প্রতিবাদী ওই যুবকের। অভিযোগ, সেই ঘটনার জেরেই ওই যুবকের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায় সশস্ত্র একদল দুষ্কৃতী। হামলা চালানো হয় আশপাশের বাসিন্দাদের উপরেও। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় প্রতিবাদী ওই যুবক এবং এলাকার অন্য এক ব্যক্তিকে। এমনকী, তিন বছরের শিশুসন্তানকে ভোজালির কোপ থেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ওই যুবকের দিদিও।
বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে লিলুয়ার ডি রোডে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার দিন প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছিল ডি রোডের তরুণ দল ক্লাবে। অভিযোগ, ওই সময়েই মণ্ডপের পিছনে দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছিল এলাকার যুবক সেবক হাইত ও তার সঙ্গীরা।
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় প্রকাশ্যে মদ্যপান নিয়ে এর আগেও দু’এক বার গোলমাল হয়েছে। কিন্তু তাতেও তা বন্ধ হয়নি। তবে সম্প্রতি এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল ওই পাড়ায় একটি অফিসে খুলে সপ্তাহে এক দিন সেখানে আসতে শুরু করায় এবং প্রকাশ্যে মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচার করায় তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান বাসিন্দারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিসর্জনের ঠিক আগে ফের প্রকাশ্যে মদ্যপান হচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করেন ওই ক্লাবেরই সদস্য সুমন দাস। তাঁর সঙ্গে প্রথমে তর্কাতর্কি এবং পরে ধাক্কাধাক্কি হয়। ক্লাবের বাকি সদস্যেরা ঘটনাটি জানতে পেরে তখনকার মতো বিষয়টি মিটিয়ে নেন। কিন্তু অভিযোগ, রাতে ক্লাবের সদস্যেরা যখন প্রতিমা বির্সজন দিতে বেরিয়ে যান, তার পরেই রাত ১২টা নাগাদ বেলুড়, বিএনআর, নন্দীবাগান থেকে ২০-২৫ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতী দলকে জড়ো করে ওই সুমনের বাড়িতে হামলা চালায় সেবক ও তার দলবল। সুমন তখন বাড়িতেই ছিলেন। অভিযোগ, দুষ্কৃতী দলটি বোমা, রিভলভার ও ভোজালি নিয়ে ওই যুবকের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে ভাঙচুর চালায়। সুমনকে হাতের কাছে পেয়ে তাঁকে ভোজালি দিয়ে আক্রমণ করে। ভোজালির কোপ পড়ে তাঁর বাঁ চোখ ও মাথায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তা দেখে এগিয়ে আসেন ওই যুবকের দিদি মম দাস। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা তখন ওই মহিলার কোলে থাকা তাঁর তিন বছরের ছেলেকে ভোজালির কোপ মারতে যায়। ছেলেকে কোনও ভাবে সরিয়ে নিলেও ভোজালির কোপ পড়ে মমদেবীর ডান হাতে ও পিঠে।
লন্ডভন্ড ঘর। শুক্রবার, লিলুয়ায় সেই প্রতিবাদী যুবকের বাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতেই থেমে থাকেনি দুষ্কৃতীরা, রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই মারধর করে তারা। এমনকী, রাতে ডি রোডে শ্বশুরবাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের বাড়ি ফেরার সময়ে রাস্তায় ওই দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন সুমন্ত গোস্বামী নামে এক যুবক। তাঁর মাথায় ভোজালির কোপ মারা হয়। সুমন ও সুমন্তকে প্রথমে টিএল জায়সবাল হাসপাতাল ও পরে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁরা সেখানে ভর্তি। অভিযোগ, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ওই তাণ্ডব চললেও পুলিশের দেখা মেলেনি। পরে এলাকার বাসিন্দারা খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় গোটা এলাকা থমথমে। ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাসিন্দারা। তরুণ দল ক্লাবের সম্পাদক শক্তি অধিকারী বলেন, ‘‘এলাকায় আগে এ রকম গোলমাল হয়নি। অভিযুক্তেরা কেউই ক্লাবের সদস্য নয়। মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করায় যে এতবড় ঘটনা ঘটবে, ভাবতে পারিনি। আমরা সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’
লক্ষ্মীরতন শুক্ল এ দিন বলেন, ‘‘প্রতি বৃহস্পতিবার আমি ওই এলাকার অফিসে যাই। সেখানে বেআইনি কাজকর্ম বন্ধ করার বিষয়ে উদ্যোগী হই। গতকাল যা ঘটে গিয়েছে, কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশকে বলেছি অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে।’’
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে। রাতেই পল্টু দাস ও অপরেশ সাঁতরা নামে দুই যুবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেবকের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এই ঘটনার পিছনে পুরনো কোনও শত্রুতা রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’