ক্ষতিগ্রস্ত পান বরজে রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। গোঘাটের কাঁঠালি গ্রামে। নিজস্ব িচত্র
গত নভেম্বরে বুলবুল ঝড়ে ধূলিসাৎ হয়েছিল পাঁচলার সাহাপুরের প্রীতম দাসের পান বরজ। তারপর আর পান চাষ করেননি। অথচ, আমপানে তিনি ‘ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি’!
হাওড়া জেলায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পানচাষির নাম ক্ষতিপূরণ-প্রাপকের তালিকায় ঢুকেছে। সেই তালিকায় রয়েছে প্রীতমের নামও। তাতে তিনি নিজেও অবাক। তিনি বলেন, ‘‘বরজের জমিতে এখন আনাজ চাষ করি। তালিকায় নাম এল কী করে, বলতে পারব না। যা করার এলাকার শাসকদলের নেতারা করেছেন। এতে আমার কোনও হাত নেই।’’
পাঁচলারই শুভরআড়া গ্রামের বেচুরাম দাসের বরজ আমপানে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁর খোঁজ পর্যন্ত নেননি বলে ওই চাষির দাবি। ব্লক অফিসে তিনি ক্ষতিপূরণের আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের পরে যাওয়ায় তাঁর আবেদন জমা নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘টাকাটা সামান্য। সেটা পেলেও অনেক উপকার হত। ফের বরজ তৈরির চেষ্টা করতাম।’’
জেলা জুড়ে পানচাষিদের ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরিতে দুর্নীতি ও স্বজন-পোষণ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। এর মধ্যে তাঁদের নজরে বিশেষ করে রয়েছে পাঁচলা। এই ব্লকে ৯৯০ জন পানচাষির নাম ক্ষতিপূরণ প্রাপকের তালিকায় উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সিংহাভাগই পান চাষের সঙ্গে যুক্ত নন। পাঁচলায় তিনশোর বেশি বরজই নেই। প্রকৃত পানচাষির নামও তালিকায় নেই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
পাঁচলায় দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। বঞ্চিত পানচাষিদের নিয়ে তাঁরা দরবার করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে বহু পানচাষি এসেছিলেন। আমরা পরিদর্শন করে দেখেছি, তাঁদের বরজের সত্যিই ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কারও নাম ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকায় নেই।’’ প্রথম দফায় মোট ২৬ জন চাষিকে নিয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে যান বলে জানান ফরিদ। তিনি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা ওই ২৬ জন চাষির আবেদনপত্র নিয়ে ব্লক প্রশাসনে কাছে গেলে ওই আবেদনপত্রগুলি নথিভুক্ত করা হয়। এই চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৬ জন চাষির নাম জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শন করে দেখেছি, তাঁদের বরজও নষ্ট হয়েছে।’’
বরজ নেই, এমন অনেকের নাম ক্ষতিপূরণ-প্রাপকের তালিকায় কী করে এল, তার তদন্ত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি চিঠি লিখবেন বলেও ফরিদ জানান। অনেকে জানিয়েছেন, প্রাপকদের তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেকে একসময়ে পান চাষের সঙ্গ যুক্ত ছিলেন। এখন নেই। অথচ, সেই পুরনো জমির রেকর্ড উল্লেখ করে তাঁদের নাম তালিকায় তুলে দেওয়া হয়েছে।
পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ওই তালিকা করা হয়। সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল জলিলের দাবি, ‘‘যাচাই করার সময়ে মনে হয় কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তালিকা তৈরিতে কোনও দুর্নীতি বা স্বজনপোষণ হয়নি। প্রকৃত চাষিরা যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা দেখা হবে। কিছু চাষির নাম পরে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’’