কাণ্ডারি: পুজোমণ্ডপে মুজফ্ফর (সাদা জামা)। নিজস্ব চিত্র
এতদিন দুর্গাপুজোর নামগন্ধ ছিল না বলাগড়ের সালালপুর গ্রামে। ঠাকুর দেখতে অন্যত্র যেতে হত গ্রামবাসীকে। ওই গ্রামে এ বার পুজো এল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ীর উৎসাহ এবং আগ্রহে। শুধু তা-ই নয়, পুজো আয়োজনে নিজের জমি দিয়েছেন, আর্থিক সাহায্যও করেছেন মুজফ্ফর হোসেন নামেওই ব্যবসায়ী।
পূর্ব পরিকল্পনা সেই অর্থে ছিল না। মুজফ্ফর দীর্ঘদিন মুম্বইতে কাটিয়েছেন। কয়েক মাস আগে পাকাপাকি ভাবে গ্রামে ফেরেন। দিনপনেরো আগে হঠাৎ গ্রামবাসীদের তিনি পুজোয় উৎসাহিত করেন। দেন সাহায্যের আশ্বাস। নিজে প্রতিমা এবং মণ্ডপের বায়া করে আসেন। মুজফ্ফরের কথায়, ‘‘মুম্বইতে দেখেছি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে দুর্গাপুজো করে। এখন এখানে আছি। তাই একসঙ্গে দুর্গাপুজো করার কথা ভাবলাম। পুজোর ক’টা দিন খুব আনন্দ হবে। সকলকে নিয়ে স্থায়ী ভাবে পুজো কমিটি গঠন করা হবে।’’
ওই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই থাকেন। দুই সম্প্রদায়ের উৎসবেই পরস্পর শামিল হন। কিন্তু দুর্গাপুজোর আয়োজন গ্রামে হয়ে ওঠেনি। আশপাশের তিন-চারটি গ্রামেওও পুজো হয় না। তাই এ বার সালালপুরের পুজোয় ষষ্ঠীর সকাল থেকেই ভিড় হচ্ছে। পুজো কমিটির সদস্য চিরণ সাঁতরা বলেন, ‘‘মুজাফ্ফরের প্রস্তাব শুনে প্রথমে আকাশ থেকে পড়ি। টাকা কোথায় পাব, কোথায় পুজো করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। অভয় দেন মুজফ্ফর। চাঁদার কথা বলেন। কমিটি গড়েন। আর্থিক সাহায্যও করেন।’’
ফকিরডাঙা, সালালপুর, জাগুলিয়া-সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই পুজোয় চাঁদা দিয়েছেন। বোধন দেখতে শুক্রবার তাঁরা ভিড় করেন। সালালপুরের বাসিন্দা নমিতা রায় এবং যশোদা রায় বলেন, ‘‘গ্রামে এই আনন্দের পরিবেশ তৈরির পুরো কৃতিত্ব মুজফ্ফরের।’’ মহম্মদ ইব্রাহিম, শেখ বদরুল রহমানের মতো গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘একসঙ্গে দুর্গাপুজোর আয়োজন এই প্রথম করলাম। আগামী বছরগুলিতেও এ ভাবেই
চালিয়ে যাব।’’