অবৈধ: দ্বারকেশ্বরের এই অংশ থেকেই পুরসভার তরফে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ছবি: মোহন দাস
পরিবেশ আদালতের নির্দেশমতো কলকাতা এবং সংলগ্ন চার জেলার (হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনা) নদী বা নদীর চর থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে প্রশাসনের। তা সত্ত্বেও হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন নদী থেকে বালি চুরিতে লাগাম পরানো যায়নি। এ বার বিনা অনুমতিতে আরামবাগ শহরে দ্বারকেশ্বরের চর থেকে বালি তোলার অভিযোগ উঠল খোদ পুরসভার বিরুদ্ধেই।
আরামবাগ শহরে নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। সেই প্রকল্পে জমি ভরাটের জন্যই প্রতিদিন দ্বারকেশ্বর থেকে বহু ট্রাক্টর এবং গরুর গাড়িতে বালি আসছে। যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দীর দাবি, “বালি নয়। দ্বারকেশ্বর নদীর চর থেকে আমরা পলি তুলছি। শহরের প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ডের জন্য জায়গা ভরাট করছি। এটা এলাকা উন্নয়নের কাজ।” সরকারি এই কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন স্বপনবাবু।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক কমলাকান্ত পোল্লে অবশ্য বলেন, “অনুমতির কথা জানা নেই। বিষয়টা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “সরকারি কাজে পুরসভা বালি নিতে পারে। তবে পুরসভার গাড়ির সঙ্গে অন্য কোনও গাড়ি গিয়ে বালি তুলে পাচার করছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।”
যে এলাকা থেকে পুরসভা দ্বারকেশ্বরের বালি তুলছে, সেটা তিরোল পঞ্চায়েতের পারআদ্রার কাছে। কিন্তু প্রতিদিন যত পরিমাণ বালি তোলা হচ্ছে, ততটা প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ডের জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। এ নিয়ে বুধবার সকালে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভও দেখান। তাঁদের অভিযোগ, এলাকাটি বন্যাপ্রবণ। এ ভাবে ইচ্ছামতো বালি তোলা হলে পরিবেশের উপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। কিন্তু প্রতিবাদ করেও লাভ হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে শাসকদলের লোকজন হুমকি দিচ্ছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশমতো হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনার সব নদী থেকে বালি ও মাটি তোলা বন্ধ। কোনও ক্ষেত্রে অনুমতি দিতে হলে সিদ্ধান্ত নেয় জেলাশাসকের অধীনে থাকা একটি কমিটি। হুগলিতে জেলাশাসকের অধীনে সেই কমিটি গঠন হলেও ব্লক স্তরে এখনও হয়নি। ফলে, মহকুমা দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর নদী একেবারেই অরক্ষিত বলে সরকারি স্তরেই অভিযোগ। নদীবাঁধের গায়ের বালি লুঠ হচ্ছে। সেতুর স্তম্ভের গা থেকেও বালি সাফ হয়ে যাচ্ছে।