রিষড়া জুড়ে বেআইনি আবাসনের রমরমা। তাতে পুরপ্রধানের নিকটাত্মীয়েরাই জড়িত বলে অভিযোগ উঠছিল তৃণমূলের একাংশ থেকেই। সেই অভিযোগে দলের ভাবমূর্তি যে ভাল রকম ধাক্কা খাচ্ছে তা বুঝে দলীয় পুরপ্রধানকে সতর্ক করল তৃণমূল। পুরপ্রধান-সহ দলীয় কাউন্সিলরদের ডেকে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে রীতিমতো ধমক দিয়ে জানিয়ে দেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ধমকের পরে পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউ নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘‘শহরে অনেক বেআইনি আবাসন হচ্ছে।’’ তবে, একই সঙ্গে সাংসদকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শুধু আমাকে এবং আমার পরিবারকে কেন দোষী করা হচ্ছে?’’
রাজ্যের শহুরে এলাকায় তৃণমূলের এক শ্রেণির কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বেআইনি ব্যবসায় মদত, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি ও জুলুমের যে লাগাতার অভিযোগ উঠছে, তা এখন গলগ্রহ হয়ে উঠেছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘নোটের খিদে’ মেটাতে ‘ডার্টি গেম’ না-খেলার জন্য দলীয় কাউন্সিলরদের সপ্তাহ দুয়েক আগেই কলকাতায় এক কর্মশালায় ডেকে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই হুঁশিয়ারির পরেই দলের একাংশ রিষড়ার পুরপ্রধান ও কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সরব হন। অভিযোগ পৌঁছয় কল্যাণবাবুর কানেও। গত রবিবার তিনি শ্রীরামপুরে নিজের কার্যালয়ে রিষড়ার পুরপ্রধানকে ডেকে ধমকান। তার সাত দিন পরেও বেআইনি আবাসনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেনি পুরসভা।
পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সব বেআইনি আবাসনের বিরুদ্ধেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালো তালিকাভুক্ত করা হবে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারকে। বেনিয়ম করলে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কিন্তু এই আশ্বাসবাণী লোক-ভুলোনো কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শহরে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, গত বছর ডিসেম্বরে শহরের ষষ্ঠীতলা লেনের একটি আবাসন নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পুরপ্রধান আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন, বাড়িটির তিন তলা নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। সেই নির্মাণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। অথচ, এখন স্থগিতাদেশ অগ্রাহ্য করে আবাসনটির ষষ্ঠ তল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিবাদ করায় সেখানকার একটি পরিবারকে প্রোমোটারদের তরফে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেনি পুরসভা।
বেআইনি ভাবে আবাসন নির্মাণের অভিযোগ আরও রয়েছে। পাঁচ তলার বেশি উঁচু আবাসন অনুমোদনের ক্ষমতা নেই পুরসভার। অথচ, গত কয়েক বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলেই রিষড়ায় সাত তলা আবাসন গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি। পুরকর্তারাই বেআইনি নির্মাণে মদত দিচ্ছেন বা নামমাত্র জরিমানা করে অনিয়মকেই মান্যতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলছেন সাধারণ মানুষ।
পুরসভারই একটি সূত্রের খবর, প্রোমোটারদের সঙ্গে পুরকর্তাদের শীর্ষ স্তরের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আবাসন হলে লোকদেখানো মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে পুরসভার তরফে। কিন্তু নামমাত্র জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছেন প্রোমোটার। এর জেরেই পর্যাপ্ত ছাড় না দিয়ে সরু গলিতেও আবাসন হচ্ছে। যেমন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া। এখানকার তৃণমূল কাউন্সিলর একাধিকবার আপত্তি জানিয়ে পুরসভায় চিঠি দিলেও কাজ আটকায়নি। পুরসভা লাগোয়া একটি আবাসন হচ্ছে মাত্র ফুট দেড়েক ছাড় দিয়ে। আর এই সব নিয়ম বহির্ভূত আবাসনের অনেকগুলির প্রোমোটারই পুরপ্রধানের নিকটাত্মীয় বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে অবশ্য তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি পুরপ্রধানের।
সাংসদ অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি প্রয়োজনে দলের শীর্ষ স্তরে জানাবেন। সাধারণ মানুষ চান, অবিলম্বে বন্ধ হোক বেআইনি নির্মাণ।