প্রতীকী ছবি
শহরে রোগের প্রকোপ বাড়লে তাঁদের সামনের সারিতে থাকতে হয়। সে ডেঙ্গিই হোক বা হালফিলের কোভিড। কাজে ঝুঁকি থাকে। কিন্তু সেই অনুযায়ী স্বীকৃতি এবং ভাতা মেলে না বলে হুগলির বিভিন্ন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্ষেপ। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ, সোমবার জেলার বিভিন্ন পুরসভার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে তাঁদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ পৌর স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন’।
সংগঠনের জেলা সভাপতি নারায়ণ শর্মা বলেন, ‘‘যৎসামান্য ভাতা পাই। ডেঙ্গিতে কাজ করলে রোজ ১৫০ টাকা মেলে। এই টাকাতেই কোভিডের কাজও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা অবিচার নয়!’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ সকলের পিপিই দূরঅস্ত, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজ়ারও জোটেনি।’’
কাজের নিরিখে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন যথেষ্টই কম বলে মানছেন একাধিক পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানেরা। তবে তাঁদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীরা সাম্মানিক পান। এ ক্ষেত্রে পুরসভার কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠনের সদস্যেরা জানান, হুগলিতে ১৩টি পুরসভায় তাঁরা প্রায় ১৩০০ জন রয়েছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী, প্রসূতি, শিশুদের খোঁজ নিতে হয়। তা ছাড়া, ডায়েরিয়া, জ্বর, টিবি-সহ নানা রোগে আক্রান্তদের খোঁজ নেওয়া, প্রয়োজনে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো, সেখানে টিকা বা ওষুধ দেওয়ার কাজও করেন তাঁরা।
ডেঙ্গির মরসুমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের তথ্য সংগ্রহ, বাড়িতে জমা জল ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা, মানুষকে সচেতনও করতে হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুরসভা তথা স্বাস্থ্য দফতরের যোগসূত্র রক্ষা করেন তাঁরা। স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্ষেপ, এত দায়িত্ব সত্বেও মাসিক সাম্মানিক ভাতা তিন হাজার টাকার কিছু বেশি। বর্তমানে কোভিডের কাজও করতে হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে সংক্রমিতের খোঁজ নেওয়া, সংক্রমিতের বাড়ির লোকজনের তালিকা তৈরি, প্রয়োজনে তাঁদের নিভৃতবাসে পাঠানো— সব ক্ষেত্রেই তাঁদের ভূমিকা রয়েছে।
উত্তরপাড়া শহরের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘করোনার কাজ করলে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মাসে মাত্র এক হাজার টাকা উৎসাহ-ভাতা দেওয়া হয়েছে। তা-ও সবাইকে নয়।’’
কোভিডের কাজে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা উৎসাহ-ভাতা, তাঁদের সরকারি কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি, মাসিক ২১ হাজার টাকা বেতন, কাজের মেয়াদ ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা-সহ কিছু দাবি তুলেছেন ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা। নবান্নেও ওই দাবি জানানো হয়েছে।
জয়া দত্ত নামে এক স্বাস্থ্যকর্মীর অভিযোগ, ‘‘ষাট বছর বয়স হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের খালি হাতে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন কাজের পরে এমন অবহেলাই আমাদের প্রাপ্য। অবসরের সময় এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’