ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার থেকে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
শনিবার বেলার দিকে বাড়িতেই ছিলেন গোন্দলপাড়ার তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যয়। হঠাৎ বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে থামল। সেখান থেকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল একটি গল্পের বই। জানানো হল, ১৫ দিন পরে সেটি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
করোনা-কালে গ্রন্থাগার বন্ধ। তাতে কী! শনিবার থেকে এ ভাবেই চন্দননগর শহরে পাঠকের বাড়িতে গ্রন্থাগার পৌঁছনো শুরু হল। চন্দননগর পুস্তকাগারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিয়মিত ভাবেই বাড়ি বাড়ি বই নিয়ে যাওয়া হবে। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বই তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ভ্রাম্যমাণ এই গ্রন্থাগার চন্দননগরের মহকুমাশাসক দফতরের করোনায় মৃত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়কে উৎসর্গ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘দেবদত্তা রায় স্মৃতি ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার পরিষেবা’। রাজ্য সরকার অধিগৃহীত চন্দননগর পুস্তকাগার কর্তৃপক্ষ জানান, সেটি তৈরি হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। একশো বছর আগে বর্তমান ভবন ‘নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দির’-এ উঠে আসে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দর্শন, ইতিহাস, জীবনচরিত-সহ বহু দুর্মূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য বই, পত্র-পত্রিকা, পাণ্ডুলিপি এখানে রয়েছে। বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। লকডাউনের সময় থেকে রাজ্যের অন্যান্য গ্রন্থাগারের মতো এটিও পাঠকের জন্য বন্ধ। ফলেি, গ্রন্থাগারের সদস্য এবং বইপ্রেমীরা সমস্যায় পড়েন। অনেকেই এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহকুমাশাসকের দফতরের একটি গাড়ি ‘চলমান গ্রন্থাগার’ হিসেবে সেজে ওঠে। গ্রন্থাগারিক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বেশ কিছু সদস্যের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের হাতে বই তুলে দেন। ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রয়াত করোনা-যোদ্ধা দেবদত্তা রায়ের নামে কেন?
গ্রন্থাগারের পরিচালন কমিটিতে মহকুমাশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন দেবদত্তা। মহকুমাশাসক (চন্দননগর) মৌমিতা সাহা বলেন, ‘‘দেবদত্তা বই পড়তে ভালবাসতেন। লকডাউনের সময় পাঠকের অসুবিধার কথা অনুধাবন করে উনিই বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবই আজ রূপায়িত হল। সেই কারণেই ভ্রাম্যমাণ পাঠশালা ওঁর নামাঙ্কিত করে ওঁকে সম্মান জানানো হল।’’
মহকুমাশাসক জানান, চলমান ওই পাঠশালা চন্দননগর এবং আশপাশে র এলাকায় ঘুরবে। প্রয়োজনে মহকুমার অন্যত্রও পাঠানো হবে। বাড়িতে গ্রন্থাগার পৌঁছে যাওয়ায় আপ্লুত তপনবাবু। শ্রীরামপুর কলেজের ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সেখানকার ‘উইলিয়াম কেরি লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টার’-এর কিউরেটরও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পাঠকের দরবারে লাইব্রেরি! তাও আবার গ্রন্থাগারিক বই দিয়ে গেলেন। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানোর ভাষা নেই।’’
চন্দননগরের বিভিন্ন সংগঠন পুস্তকাগারের বই যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের দাবিতে সম্প্রতি প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছিল। প্রশাসন উত্তরে জানায়, বই যত্নেই রাখা হচ্ছে। গ্রন্থাগারের নয়া উদ্যোগে ওই সব সংগঠনের সদস্যেরা খুশি। তাঁদের তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর কুশারি, কুণাল সেন প্রমুখ বলেন, ‘‘এতে বইয়ের নাড়াচড়া হবে। অর্থাৎ, বই ভাল থাকবে। তা ছাড়া, যে সব বয়স্ক মানুষ করোনা-পরিস্থিতিতে বেরোতে পারছেন না, তাঁদের মনের খিদে মিটবে। রাজ্যে এটা মডেল হোক।’’