প্রতীকী ছবি।
গঙ্গার পাড়ে প্রাতঃভ্রমণ বা সান্ধ্য আড্ডা। কোনওটাই এখন নিরাপদ নয় চুঁচুড়ায়। মাস্কে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে সন্ত্রস্ত এলাকাবাসী।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত এক সপ্তাহে জেলার সদর শহর চুঁচুড়ায় কমবেশি পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে চুঁচুড়া থানায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিনতাইবাজদের ‘মডাস অপারেন্ডি’ একই। মুখ ঢাকা ছিল মাস্কে। মাথায় ছিল হেলমেট। আর যে মোটরবাইকগুলিতে চেপে তারা ছিনতাই করেছে, সেগুলির নম্বর দেখে বোঝার উপায় নেই বাইকগুলি কোন রাজ্যের। গঙ্গাপাড়ের নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একাকী মহিলাদেরই মূলত নিশানা করছে এই দুষ্কৃতী দল। গলার হার অথবা নাক ও কানের দুল ছিনিয়ে ব্যান্ডেলের দিকে চম্পট দিচ্ছে তারা। প্রাতঃভ্রমণ বা সান্ধ্য ভ্রমণে বেরনো একাকী ব্যক্তিদেরও টার্গেট করা হচ্ছে।
পুলিশ ফাঁদ পাতলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি। পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়েছে গঙ্গার ধার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে ঘুটিয়াবাজার, পিপুলপাতি, রথতলা ও বকুলতলার মতো অঞ্চলে। ত্রাস এতটাই যে, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও দুষ্কৃতী হামলার শিকার কোনও ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমের কাছে নামপ্রকাশ করছেন না। তাঁদের ধারণা, দুষ্কৃতীদের স্থানীয় যোগাযোগ অবশ্যই রয়েছে। তাই অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ্যে এলে ফের তাঁদের উপরে হামলা হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, গঙ্গার উল্টো পাড়ে হালিশহর এবং নৈহাটির দিক থেকে চুঁচুড়ায় ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তারপর সন্ধ্যায় অপারেশন চালিয়ে ব্যান্ডেল পেরিয়ে ঈশ্বরগুপ্ত সেতু হয়ে বা নৌকায় চেপে ফিরে যায়। এই ধারণা অমূলক নয় বলে মনে করছে পুলিশও।
পরপর দুষ্কৃতী হানার ঘটনায় উদ্বেগে পুলিশ। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি হুমায়ুন কবীর জানান, পুলিশ তার নিজস্ব সূত্র কাজে লাগিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় নজরদারি চলছে। সাদা পোষাকেও পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’’
করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে মুখাবরণের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু এর সুযোগ যে দুষ্কৃতীরা এই ভাবে নেবে, তা ভাবতে পারেননি দুষ্কৃতী হামলার শিকার এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকদিন আগে ভোরে ঘুটিয়াবাজার কালীতলায় প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম। আচমকা মুখ ঢাকা মোটর সাইকেলে সওয়ার দুই যুবক আমার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। চিৎকার করে উঠি। কিন্তু তখন কেউ সেখানে ছিল না।’’ সে দিন রাতে গৃহ-শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কয়েকজন ছাত্রী। অভিযোগ, তাঁদের ঘিরে ধরে মোটরসাইকেলে সওয়ার মাস্কে মুখ ঢাকা দু’জন দুষ্কৃতী। ছাত্রীদের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন স্থানীয় কয়েকজন। এর পরেই পিঠটান দেয় দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চুঁচুড়ার রথতলা রামকৃষ্ণ লেনের বাসিন্দা এক মহিলার কাঁধের ব্যাগ ছিনতাই করে চম্পট দেয় কয়েকজন দুষ্কৃতী। তাদেরও মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট ছিল।
পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় অবস্থা এমন যে, প্রাতঃভ্রমণ এবং সান্ধ্যভ্রমণে বেরনো বন্ধ করেছে অনেকে। এ অভিযোগও আসছে যে, মুখে মাস্ক পরে গৃহস্থের বাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি মারছে কেউ কেউ। ফলে, সন্ধ্যা নামলেই জানালা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
চুঁচুড়ার বাসিন্দা বৈশাখী বসু বলেন,‘‘মাঝে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি কিছু কম বয়সি যুবক মাস্ক ও হেলমেটে মুখ ঢেকে মোটরসাইকেলে চেপে ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে নির্জন এলাকায় এবং শুনশান রাস্তায় এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। পুলিশ এদের গ্রেফতার করতে না-পারলে অচিরেই শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে পড়বে।’’ পিপুলপাতির বাসিন্দা সুমন্ত সান্যাল বলেন, ‘‘মাথায় হেলমেট, মুখে মাস্ক পরে অদ্ভুত সব নম্বর লেখা মোটরসাইকেলে চেপে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। এদের সঙ্গে শহরের অলিগলি সম্বন্ধে পরিচিত স্থানীয় কিছু লোকজনের যোগ রয়েছে বলে মনে হয়। দুষ্কৃতীদের আতঙ্কে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেতে ভয় পাচ্ছে ছাত্রীরা।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্ণি ত করার চেষ্টা চলছে।