রাস্তায় গুলির লড়াই, গুপ্তিপাড়ায় নিহত ১

রাতের স্তব্ধতা খান খান হয়ে যাচ্ছিল অবিরাম গুলির শব্দে। লম্বা পিচরাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে সামনে-পিছনে একটি টাটা সুমোর পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ল একটি স্করপিও এবং একটি মারুতি সুইফ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০২:০০
Share:

প্রথমে স্করপিও থেকে এক যুবক নেমে সুমোর সামনে এসে গুলি চালায়। তার পরে সুইফ্ট থেকেও দুষ্কৃতীরা নেমে গুলি চালাতে থাকে। সুমোর দুষ্কতীরাও নেমে আসে। শুরু হয়ে যায় গুলির লড়াই।

রাতের স্তব্ধতা খান খান হয়ে যাচ্ছিল অবিরাম গুলির শব্দে।

Advertisement

লম্বা পিচরাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে সামনে-পিছনে একটি টাটা সুমোর পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ল একটি স্করপিও এবং একটি মারুতি সুইফ্ট। তিনটি গাড়ির জনা বিশেক আরোহী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ‘পজিশন’ নিল মুহূর্তে। তার পরে শুরু গুলি বিনিময়। রাস্তার দু’দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল একের পর এক গাড়ি। চালকেরা অবাক হয়ে দেখলেন মিনিট পনেরোর এই ‘যুদ্ধ’ এবং তার পরিণতি। গুলিতে মারা গেল এক জন। ঘায়েল তিন জন।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় এই ‘গ্যাং-ওয়ার’ কাঁপিয়ে দিল হুগলির বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়ার ফতেপুর এলাকার বাসিন্দাদের। এসটিকেকে রোডের এই লড়াইয়ে নিহতের নাম অসীম মণ্ডল (৩০)। জখম চুঁচুড়ার দুষ্কৃতী বিশাল দাস এবং তাঁর দুই শাগরেদ দিগ্বিজয় সিংহ এবং অংশুমান মাল ওরফে উষ্ণ। অসীমও বিশালের শাগরেদ ছিল।

Advertisement

দীপক সিংহ এবং মন্টু চৌধুরী নামে দুই দুষ্কৃতী ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার হয়েছে। তারা বিশালের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী টোটন বিশ্বাসের শাগরেদ। জেলা পুলিশের একাংশ মনে করছে, চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকার তোলাবাজির দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই লড়াই। এসপি সুকেশ জৈন জানান, ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩০ রাউন্ড গুলি ও চারটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। বিশাল, দিগ্বিজয় কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। অংশুমানের চিকিৎসা চলছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে।

১. হুগলিমুখী টাটা সুমোকে ফতেপুর পর্যন্ত ধাওয়া করে স্করপিও এবং সুইফ্ট।

২. ফতেপুরে স্করপিওটি টাটা সুমোর সামনে এসে আড়াআড়ি রাস্তা আটকায়। সুইফ্ট দাঁড়িয়ে যায় সুমোর পিছনে।

৩. প্রথমে স্করপিও থেকে এক যুবক নেমে সুমোর সামনে এসে গুলি চালায়। তার পরে সুইফ্ট থেকেও দুষ্কৃতীরা নেমে গুলি চালাতে থাকে। সুমোর দুষ্কতীরাও নেমে আসে। শুরু হয়ে যায় গুলির লড়াই।

পুলিশ সূত্রে খবর, চুঁচুড়ায় তোলাবাজির দখল নিয়ে বছর খানেক ধরেই টোটন ও বিশালের দলবলের দড়ি টানাটানি। টোটন এখন জেলে। সম্প্রতি তার দাদাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে বিশালের বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশের একাংশের আশঙ্কা ছিল, টোটনের দল প্রত্যাঘাত করবে।

আরও পড়ুন: ফাঁস হয়ে গিয়েছে বহু আধার কার্ডের তথ্য, সুপ্রিম কোর্টে মেনে নিল সরকার

বিশাল ইদানীং রানাঘাটে ডেরা বেঁধেছিল। মঙ্গলবার টাটা সুমোতে পাঁচ সঙ্গীকে নিয়ে সে শান্তিপুরের দিক থেকে কালনা হয়ে হুগলিতে ঢুকছিল। স্করপিও এবং সুইফ্টে পিছু নেয় দীপক-মন্টুরা। ফতেপুরে তারা বিশালের গাড়িটি ধরে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্করপিও থেকে নেমে বছর বাইশের এক যুবক সুমোর সামনে এসে ‘অনেক জ্বালিয়েছিস’ বলেই গুলি চালাতে শুরু করে। অসীম লুটিয়ে পড়ে। তার পরেই শুরু হয় গুলির লড়াই। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এক জন গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ল। আর এক জন কপালের নীচে গুলি খেয়ে ঝোপে লুকিয়ে পড়ল। হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল।’’

বছর খানেক ধরেই চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, ব্যান্ডেল-সহ হুগলির নানা প্রান্তে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ঘটনা সামনে এসেছে। নিহত অন্তত ২৪ জন। এ দিনের ঘটনায় ফের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গ্রাফিক্স: প্রবাল ধর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement