হামলার অভিযোগে ধরা হচ্ছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র
এক যুবককে মারধরের অভিযোগে শনিবার হিন্দু জাগরণ মঞ্চের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল সিঙ্গুর থানার পুলিশ। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রবিবার দুপুরে ওই থানায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল ওই সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত হল পুলিশ।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ জনাপঞ্চাশ লোক থানায় হাজির হয়। তাদের মুখে ছিল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক জন বেরিয়ে এসে ইট ছুড়তে শুরু করে। তাতে চার পুলিশকর্মী ও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার জখম হন। তাঁদের মধ্যে দুই পুলিশকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। সরকারি কাজে বাধা, হামলা এবং পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ওই সংগঠনের চার নেতা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘হামলায় যুক্ত অন্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’ লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করে ওই পুলিশকর্তা দাবি করেন, ‘‘শুধু লাঠি উঁচিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।’’
জখম পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের স্থানীয় নেতা বাবাই পরামাণিক। তাঁর দাবি, ‘‘বিনা কারণে আমাদের এক কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাই তাঁকে ছাড়াতে গিয়েছিলাম। আমাদের কেউ পুলিশের উপরে হামলা করেনি। পুলিশ আমাদের কোনও কথাই শুনতে চায়নি। আগেই লাঠিচার্জ করে আমাদের সরিয়ে দেয়।’’ রাতে থানায় গিয়ে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনিও ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘স্থানীয় লোকজন হামলা করতে পারে। আমাদের ওই সংগঠনের কেউ করেনি। পুলিশকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়া দশমীর রাতে দিয়াড়া এলাকায় এক যুবককে মারধর করা হয়। সেই ঘটনায় শনিবার রাতে শুভ দাস নামে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের বাড়ি দিয়াড়ার গোবিন্দপুরে। এ কথা জানাজানি হতেই রবিবার দুপুরে ওই মঞ্চের নেতাকর্মীরা থানায় ভিড় করেন। তাঁরা গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানান। তারপরেই ওই কাণ্ড। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে তাণ্ডব। পরিস্থিতি সামাল দিতে হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন সৌরভ দাস নামে এক কনস্টেবল। তাঁকে প্রথমে সিঙ্গুর গ্রামীণ ভর্তি করানো হয়। পরে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতার হাসপাতালে।
এ ভাবে থানায় হামলার নিন্দা করেছে অন্য বিরোধী দল এবং শাসক তৃণমূল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘গণতন্ত্র ধ্বংসের কাজ করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। থানায় হামলা করে ওদেরই সংগঠন সমাজকে ধ্বংস করার কাজ করছে।’’ বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘ওরা বাংলাকেও লন্ডভন্ড করার চেষ্টা করছে। সরকার ওদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে? ওরা তো তৃণমূলের বি-টিম।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।’’