লোক আদালতে বিচারকের আসনে রূপান্তরকামী শ্যাম

সম্প্রতি হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায় রূপান্তরকামীদের নিয়ে এক কর্মশালায় লোক আদালতের বিচারক হিসেবে রিষড়ার প্রভাসনগরের বাসিন্দা, বছর ত্রিশের শ্যাম ঘোষ নামে ওই রূপান্তরকামীর নাম ঘোষণা করেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৯
Share:

বদল: কাজে ব্যস্ত শ্যাম ঘোষ (ডান দিক থেকে তৃতীয়)। নিজস্ব চিত্র

সমাজের ধরাবাঁধা নিয়মে প্রায় জোর করেই এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর। কিন্তু শরীরে নারী হলে কী হবে, সেই ছেলেবেলা থেকেই তো মনে মনে তিনি পুরুষ। এহেন সংসার জীবনে মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য লড়াই করে নিজের পথে হাঁটতে শুরু করেন। রূপান্তরকারী এই পুরুষকেই হুগলিতে লোক আদা‌লতে বিচারকের ভূমিকায় দেখা গেল শনিবার।

Advertisement

আদালতে জমে থাকা কিছু মামলা বা লঘু অপরাধের নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে। প্রাক্তন বা বর্তমান বিচারক, আইনজীবী এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি এখানে বিচারক হন। সম্প্রতি হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায় রূপান্তরকামীদের নিয়ে এক কর্মশালায় লোক আদালতের বিচারক হিসেবে রিষড়ার প্রভাসনগরের বাসিন্দা, বছর ত্রিশের শ্যাম ঘোষ নামে ওই রূপান্তরকামীর নাম ঘোষণা করেন। আগে যিনি পরিচিত ছিলেন শম্পা নামে। সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে এই স্বীকৃতি আদায় করে নেন তিনি।

শনিবার শ্রীরামপুর আদালতের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট স্বরূপ চক্রবর্তী এবং আইনজীবী অংশুমান চক্রবর্তীর সঙ্গে রীতিমতো দক্ষ হাতে বিচারক হিসেবে লোক আদালতের একটি বেঞ্চের দায়িত্ব সামলান শ্যাম। পাঁচটির মধ্যে ওই বেঞ্চেই সবচেয়ে বেশি মামলা ওঠে। গোটা পঁয়ত্রিশ মামলার ফয়সালা হয়। বিচারকের চেয়ার থেকে বেরিয়ে শ্যাম বলেন, ‘‘গুরুদায়িত্ব বেশ উপভোগ করেছি। আগে রূপান্তরকামী মহিলা লোক আদালতের বিচারক হয়েছেন। কিন্তু রূপান্তরকামী পুরুষ হিসেবে আমিই প্রথম।’’

Advertisement

কলকাতার নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন‌ শ্যাম। দূরশিক্ষার মাধ্যমে এমবিএ পড়ছেন। বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই মানসিক ভাবে নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হতো আমার শরীর কেন বাবা-দাদার মতো হচ্ছে না! নিজের ভাবনা কাউকে বোঝাতে পারতাম না। যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলাম। মেধাকে সম্মান না-জানিয়ে আমার পুরুষসত্তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করত সবাই।’’

২০১২ সালে কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নারীসত্তা যে তাঁর নেই, ‘স্বামী’কেও বোঝাতে পারেননি। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সবের মধ্যেই রূপান্তরকামীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এর পরেই পালাবদলের শুরু। কাউন্সেলিংয়ের পরে মানসিক ভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। অপর্ণাদেবী তাঁর ঘনিষ্ঠদের বোঝান। ডিভোর্স হয়। রূপান্তরকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন শ্যাম।

তিন বছর আগে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করার পক্ষে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাধা আসতেই থাকে বলে রূপান্তরকামীদের অভিযোগ। সৌনকবাবু জানান, রূপান্তরকামীরা সমাজের বিশেষ ক্ষেত্রে সুযোগ পেলে তা সমাজের ভুল ধারণা ভাঙার পক্ষে সহায়ক হবে। সুপ্রিম কোর্টের পথ-নির্দেশিকায় অনুপ্রাণিত হয়েই শ্যামকে বিচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement