শোক: গৃহপ্রবেশের জন্য সব আয়োজন করা হয়ে গিয়েছিল। নিজস্ব চিত্র
হোগলার একচিলতে ঘরে তাঁর বেড়ে ওঠা। কষ্ট করে পড়াশোনা করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিলেন। চাকরি পেয়ে উপার্জনের অর্থ জমিয়ে দাদার সঙ্গে মিলে নতুন বাড়ি তৈরি করেছিলেন। শুক্রবার ছিল গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান। কিন্তু আনন্দ বদলে গেল শোকে। ফুল কিনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল উলুবেড়িয়ার ওই ইঞ্জিনিয়ারের।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অর্ণব মাইতি (২৪)। তিনি উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানা এলাকার খলিসানি-রথতলার বাসিন্দা ছিলেন। ওই এলাকাতেই তাঁর নতুন বাড়িতে এ দিন সকাল থেকে অনুষ্ঠানের জন্য অতিথিরা আসতে শুরু করেন। বাড়িটি সাজানোর জন্য এক বন্ধুকে নিয়ে মোটরবাইকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কোলাঘাটে ফুল কিনতে যাচ্ছিলেন অর্ণব। রাজাপুরেরই শ্রীরামপুরের কাছে একটি লরি বাইকটিকে ধাক্কা মারে। অর্ণব এবং তাঁর বন্ধু রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বন্ধুকে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ অর্ণবের দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। লরিটিকে পুলিশ ধরতে পারেনি। খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গৃহপ্রবেশের দিন অর্ণবকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। অর্ণব কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। তাঁর দাদা স্বর্ণেন্দু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। বাবা প্রাণতোষবাবু দিনমজুরি করেন। অর্ণবের মা জ্যোৎস্নাদেবীর হাহাকার, ‘‘দুই ছেলেকে নিয়ে হোগলার ঘরে শীতে-বর্ষায় কত কষ্ট করে থেকেছি। দুই ছেলে রোজগার করে বাড়িটা তৈরি করল। ভেবেছিলাম এ বার নতুন বাড়িতে একটু শান্তিতে থাকতে পারব। কিন্তু এ কী হল!’’
এ দিন ওই নতুন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল চারপাশ আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। কিন্তু অর্ণবের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই পুজোর আয়োজন সব বন্ধ হয়ে যায়। আত্মীয়দের চোখেও জল।
এ দিনই ভোরে বাগনানের মানকুর মোড়ের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শেখ মামুদ (৬৫)। তিনি বাগনানের কাছারিপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। রাস্তা পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।