সাইকেলে সৌভিক। নিজস্ব চিত্র
সাইকেলটি যেন তাঁর ভ্রাম্যমাণ ‘দোকান’!
আনাজ, মাছ, মাংস, মিষ্টি, ওষুধ, জন্মদিনের কেক, আম, আপেল, চিকেন চাউমিন— কী নেই!তবে চাইলেই মিলবে না। বরাত দিতে হবে। যে যা চান।
সদ্য হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে হাওড়ার বাগনানের দুর্লভপুরের সৌভিক রায় ভেবেছিলেন ভাল চাকরি করবেন। করোনা তাঁকে অন্য পথে নিয়ে গেল। এখন দিনভর সাইকেলে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব ‘পরিষেবা’। গৃহস্থদের যাঁর যা লাগে, তা নিয়েই হাজির করছেন তিনি। পরিবারপ্রতি পারিশ্রমিক ১০-২০ টাকা (দূরত্ব অনুযায়ী)। সৌভিকের কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতি অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছে। চাকরির বাজার হয়তো আর সে ভাবে প্রসারিত হবে না। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন কাজের ক্ষেত্র খুঁজে নিতেই হবে। জীবন তো আর থেমে থাকবে না।’’ চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে একটি সংস্থায় কাজে যোগ দেওয়ার কথা সৌভিকের। কিন্তু তার আগেই ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয়ে যায় দেশব্যাপী লকডাউন। ভণ্ডুল হয়ে যায় সৌভিকের চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা। দিশাহারা হয়ে পড়েন। হতাশও। কিন্তু ঘরবন্দি থাকেননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিচার করে দেখলাম, প্রতিকূল পরিস্থিতিকেও সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করা যায়। মাঠে নেমে পড়লাম।’’ করোনা ঠেকানোর অন্যতম উপায়, ভিড় এড়িয়ে চলা। সে জন্য পুরো লকডাউন বা আংশিক লকডাউনের রাস্তায় হাঁটছে সরকার। দোকান-বাজারে ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন সৌভিক। লকডাউনের কিছুদিন পর সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। তাঁর পরিষেবার কলেবর বাড়ছে। সৌভিক বলেন, ‘‘আমার মনে হল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যদি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায় তা হলে অনেককেই আর বাইরে বেরোতে হবে না। আমারও পকেটে কিছু পয়সা আসবে।’’ সৌভিক নিজে কোনও পণ্য বিক্রি করেন না। ক্রেতারা যে জিনিসের বরাত দেন, সেটি তিনি নিজে খরচ করে বাজার থেকে কেনেন। ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দাম নেন। সঙ্গে তাঁর পারিশ্রমিক। পথে নামার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার চালিয়েছিলেন সৌভিক। প্রথম দিকে বরাত বেশি জোটেনি। এখন সারাদিন ব্যস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক অসহায় বয়স্ক মানুষ আছেন। বাড়িতে একা থাকেন। তাঁদের কাছ থেকে বরাত পাই মূলত ওষুধের।’’ সৌভিকের বাবা বাবলু রায় চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। ছেলে নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে এই বাজারে লড়াই চালাচ্ছে, এটা দেখেই তিনি খুশি। বাগনানের এনডি ব্লকের গৌরব মণ্ডল বহুজাতিক সংস্থার পদস্থ কর্মী। করোনা আবহে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন। তিনি সৌভিকের এক ‘গ্রাহক’। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর পরিষেবা আমি নিই। দেশের বড় শহরগুলিতে এই ধরনের পরিষেবা অনেক আছে। কিন্তু বাগনানের মতো ছোট মফস্সলে একেবারে নতুন।’’