জীবন দান: পড়ে যাওয়া গাছকে সোজা করার চেষ্টা চলছে। বাগনানের ছআনি গ্রামে। ছবি: সুব্রত জানা
পঞ্চাশ ফুটের সেগুন গাছটাকে এক ঝটকায় মাটিতে ফেলে দিয়েছিল আমপান। ২৫ বছর আগে নিজের হাতে লাগানো গাছটাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল বাগনানের ছআনি গুজরাত গ্রামের চিত্রশিল্পী তপন করের। ঠিক করেন, এ ভাবে মরতে দেবেন না গাছটাকে। রবিবার সেই গাছকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফের শিকড়ে ফেরালেন তিনি।
বছর ছেষট্টির তপনবাবুর বাড়িতে প্রায় ২৫ বছর ধরে রয়েছে সেগুন গাছটি। চারা লাগিয়েছিলেন শিল্পী নিজেই। গাছটির নিয়মিত পরিচর্যাও করতেন। এখন গাছটির উচ্চতা প্রায় পঞ্চান্ন ফুট। শিকড় উপড়ানো গাছটি কেনার জন্য নিয়মিত তপনবাবুর বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু তপনবাবু প্রত্যেককেই সাফ জানিয়ে দেন, ওই গাছ বিক্রির জন্য নয়। গাছটিতে ফের প্রাণ সঞ্চার করতে চান তিনি।
কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই সব সময় সহজে উপায় মেলে না। তাই ২০ মে পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। এর মধ্যে অবশ্য শিকড়ে যাতে পোকা বাসা না বাঁধে, সেজন্য ওষুধ দিয়েছিলেন তিনি। ওর মাঝে অনেকেই ওই সেগুন গাছ প্রতিস্থাপন করতে এসেছেন। কিন্তু অত উচ্চতার গাছকে মাথা তুলে দাঁড় করাতে পারেননি কেউই। দিন চারেক আগে তপনবাবু সন্ধান পান এক নলকূপ মিস্ত্রির। বাসুদেব বেরা নামে ওই মিস্ত্রি জানান, তিনি আগে এমন অনেক উপড়ে যাওয়ার গাছ বসিয়েছেন।
এতবার বিফল হওয়ার পর এই কথায় মন গলেনি তপনবাবুর। রবিবার ছিল পরীক্ষা। বাঁশের খাঁচা বেঁধে কপিকলের সাহায্য জনা সাতেক মজুর ঘণ্টা দশেকের চেষ্টায় প্রথমে সোজা করা হয় গাছটিকে। গাছের মাথার অংশেও কিছুটা কাটা হয় ভার কমানোর জন্য। তারপর ফের মাটিতে সোজা করে দাঁড় করিয়ে অনেক মাটি দেওয়া হয় গোড়ায়। আপাতত গাছটির ভার লাঘবের জন্য কয়েকটি খুঁটির সাহায্য নেওয়া হয়েছে, যাতে সেটি ফের ঝড়-বৃষ্টিতে উল্টে না যায়।
তপনবাবু জানান, গাছটি ঠিক করতে খরচ পড়েছে ১০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘‘গাছটি বিক্রি করতে পারব না। নিজের হাতে বসিয়েছি। তার ক্ষতি হলেই সেটাকে বেচে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু চেষ্টা করলেই তাকে ফের প্রাণ দেওয়া সম্ভব। এর আগেও অনেক উপড়ে যাওয়া ছোট গাছ বসিয়েছি। তবে এত বড় গাছ ফের বসানো, এই প্রথম।’’
এ ধরনের কাজ অবশ্য এখন রাজ্যের বহু জায়গাতেই হচ্ছে। সম্প্রতি হুগলির একটি পুরসভার উদ্যোগেও বিশেষ পদ্ধতিতে পড়ে যাওয়া গাছ ফের বসানো হয়েছে। তবে গাছকে ভালবেসে এমন ব্যক্তিগত উদ্যোগও নজরে আসে কম। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন হাওড়া জেলা বন দফতরের আধিকারিক রাজু সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বড় গাছকেও ফের বসানো যায় সঠিক পদ্ধতিতে। গাছটি বাঁচে কি না, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে পরিবেশ রক্ষায় তপনবাবু যে কাজ করেছেন সেটা প্রশংসনীয়।’’