প্রতীকী ছবি।
ভোরের দিকে প্রায়ই মাঠের পাশে এক তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যাচ্ছিল ক্রিকেট কোচিং ক্লাবের প্রশিক্ষককে। কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান সেই ক্লাবের মালি। কিন্তু ক্লাবকর্তারা প্রথমে অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের কাছে প্রমাণ দেখাতে সেই সব মুহূর্তের কিছু ছবি মোবাইলে তুলেছিলেন তিনি। অভিযোগ, বিষয়টি জানতে পেরে ওই মালিকে ব্যাট ও উইকেট দিয়ে নৃশংস ভাবে পিটিয়েছেন সেই প্রশিক্ষক। অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই প্রশিক্ষককে গ্রেফতার করে খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার ডুমুরজলা ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশে একটি ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন ওই ক্রিকেট কোচিং ক্লাব এবং পাশের আর একটি ক্লাবের সুইমিং পুলের দেখভাল করেন বিধান অধিকারী নামে এক প্রৌঢ়। তিনি ওই এলাকারই হরিপদ ভট্টাচার্য লেনের বাসিন্দা। দিন কয়েক আগে ক্রিকেট ক্লাবের কর্তাদের বিধানবাবু জানান, ভোরে তিনি যখন পাশের সুইমিং পুলে জল ভরার জন্য পাম্প চালাতে আসেন, তখন প্রায়ই অরিজিৎকে এক তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেন। ক্লাবকর্তাদের কাছে এ নিয়ে নিজের আপত্তির কথাও জানান তিনি। কিন্তু মালির কথা বিশ্বাস না করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছবি তুলে দেখাতে বলেন। সেই মতো বুধবার ভোরে অরিজিৎ ও ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠতার ছবি তুলে রাখেন বিধানবাবু। কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে যান ওই প্রশিক্ষক। এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ফের ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মাঠে আসেন।
হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিধানবাবু জানান, এ দিন প্রথমে ওই তরুণীই তাঁর কাছে এসে তাঁদের সমস্ত ছবি ফোন থেকে মুছে দিতে বলেন। বিধানবাবুর দাবি, তিনি ছবি মুছে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ক্লাবের মাঠে ওই ধরনের কাজকর্ম করতে তরুণীকে বারণ করেন। কিন্তু তরুণী তাতে কর্ণপাত করেননি। অভিযোগ, তিনি বিধানবাবুর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময়ে হঠাৎ অরিজিৎ পিছন থেকে এসে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে
বিধানবাবুর মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত করেন বলে অভিযোগ। আঘাতের জেরে প্রৌঢ়ের মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। অভিযোগ, মাথা ফেটে গিয়েছে দেখেও অরিজিৎ বিধানবাবুকে উইকেট দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকেন। প্রাণে বাঁচতে ওই প্রৌঢ় মালি পাশের সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন। অভিযোগ, অরিজিৎ-ও পুলে ঝাঁপ দিয়ে ফের আক্রমণ করেন বিধানবাবুকে। জখম প্রৌঢ় বললেন, ‘‘আজ আমাকে ও খুনই করে ফেলত। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসায় আর পারেনি।’’
ক্লাবের কর্মীকে এ ভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সেখানে ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। তাঁরাই বিধানবাবুকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে খবর দেন চ্যাটার্জিহাট থানায়। পুলিশ এসে অরিজিৎকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। পরে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে ওই ক্লাবের কর্মকর্তাদের কথা বলতে যাওয়া হলেও তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মালির মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।