আগমন: বোরো কালীতলার পুজো মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: তাপস ঘোষ
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখে তিনি কলকাতার দুর্গাপুজোর ‘কার্নিভাল’ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, এ কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে একাধিকবার বলেছেন। বুধবার চন্দননগরে এসে তিনি সেই বিসর্জনের শোভাযাত্রাকে ‘সিস্টেমে’ বাঁধার পরামর্শ দিলেন।
এ দিন বোরো সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চন্দননগরের কার্নিভাল থেকে আইডিয়া নিয়েই আমরা কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল শুরু করেছি। কিন্তু আপনাদের থেকে আমরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি। এখানে ছোট জায়গা, হুড়হুড় করে দেন। আমি তা করি না। আমরা মহড়া দিই। অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে হয়। কয়েক কোটি লোক তা দেখে।’’ পাশে থাকা চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে তিনি নির্দেশ দেন, কলকাতায় যে ‘সিস্টেমে’ কার্নিভাল হয়, আগামী বছর এখানে পুলিশের প্রস্তুতি-বৈঠকে তিনি যেন তা বলে দেন। উপস্থিত মানুষকে নেতিবাচক চিন্তা না করে সদর্থক ভাবারও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিসর্জনের শোভাযাত্রার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। গত বছর এই শোভাযাত্রাকে কলকাতার কার্নিভালের ধাঁচে করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক ওই ভাবনার কথা শুনেই অবশ্য চন্দননগরবাসীর একাংশের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। কার্নিভালের মোড়কে নানা বিধিনিষেধ আরোপ এবং ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। শেষে ওই পরিকল্পনা বাতিল হয়। পরম্পরা অনুযায়ী শোভাযাত্রাই হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পরের বছর থেকেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগরে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারেও এলেন। তবে, কার্যত শেষ লগ্নে, দ্বিতীয় নবমীর দুপুরে। হেলিকপ্টারে এসে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী বোরো কালীতলার পুজো মণ্ডপে যান। ঠাকুর প্রণাম করে অঞ্জলি দেন, স্তোত্রপাঠ করেন। সঙ্গে ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল, মন্ত্রী অসীমা পাত্র, প্রাক্তন সাংসদ রত্না দে নাগ প্রমুখ। কালীতলা থেকে বেরিয়ে মমতা যান বোরো সর্বজনীনের মণ্ডপে।
তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক অশোক সাউকে দেখা যায়নি। তাঁর কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘অশোকদার শরীরটা খারাপ। তাই আসেননি।’’ পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অশোকবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ ঠিকই। তবে, বেরোতে পারব না এতটা অসুস্থ নই। আমাকে কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। স্থানীয় বিধায়ক অনুষ্ঠানের বিষয়টি তদারক করেছেন। উনিই বলতে পারবেন।’’ বিধায়ক ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন দর্শনার্থী হিসেবে। এখানে কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা নয়। ফলে এটা নিয়ে বলতেও পারব না। পুজো কমিটিকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’’
যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ইন্দ্রনীলকে তিনটি গান গাইতে হয়। ইন্দ্রনীল জানান, তিনটি গানই মুখ্যমন্ত্রীর গাওয়া এবং সুর দেওয়া। মজা করে ইন্দ্রনীল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী গাড়িতে যেতে যেতেই গান বেঁধে ফেলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ‘মোবাইল-গীতিকার’ বলেও সম্ভাষণ করেন।