সুলেখাদেবী
অন্য একটি মামলায় সে আগে থেকেই ছিল শ্রীঘরে। পুলিশ ভাবতেও পারেনি ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার বৃদ্ধা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের পিছনেও রয়েছে তার হাত!
আর তাকে লাগাতার জেরা করেই শেষমেশ ওই খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ। সে ব্যান্ডেলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী অর্জুন পাসোয়ান ওরফে গোর্খা। খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় সুলেখাদেবীর দীর্ঘদিনের পরিচারিকা মাধবী কর্মকার, তার স্বামী বিশু ও সুবল কর্মকার নামে এক রাজমিস্ত্রিকে। ডাকাতির আগে চিনে ফেলাতেই সুলেখাদেবী খুন হন এবং ধৃতেরা সে কথা কবুল করে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের দাবি, ওই ঘটনার মূল চক্রী মাধবীই। ধৃতেরা সকলেই কাজিডাঙা এলাকার বাসিন্দা। আজ, বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করানো হবে। ওই ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে। ২০ দিনের মাথায় দিদির হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদের কথা জানতে পেরে সুলেখাদেবীর ভাই, ওই এলাকারই বাসিন্দা শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষকে বিশ্বাসের পরিণাম এই হল? দিদিকে মেরেই ফেলতে হল! ওদের যেন কড়া শাস্তি হয়।’’
গত ২৬ অক্টোবর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অঙ্কের শিক্ষিকা সুলেখাদেবীকে তাঁর বাড়িতে গলায় নলি কেটে খুন করে দুষ্কৃতীরা। বছর পঁয়ষট্টির অবিবাহিত ওই বৃদ্ধা বাড়িতে একাই পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন। দুই পরিচারিকা তাঁর দেখভাল করতেন। তাদেরই এক জন মাধবী। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছিল, কিছু গয়না খোয়া গিয়েছে। দুই পরিচারিকাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। কিন্তু কোনও দিশা মিলছিল না। পুলিশ কার্যত অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছিল। কারণ, ওই বাড়ি থেকে ঠিক কী কী খোয়া গিয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। অন্ধকারে ছিলেন সুলেখাদেবীর ভাইবোনেরাও।
খুনের কিছুদিন পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না-পারায় সমালোচনা কম হয়নি। সম্প্রতি পুলিশ এক দুষ্কৃতীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই দুষ্কৃতীই পুলিশকে জানায়, গোর্খা সব জানে। কারণ সে সরাসরি যুক্ত। সেই রাতের ‘অপারেশন’-এও ছিল।
অভিযুক্ত: পরিচারিকা মাধবী কর্মকার (বাঁ দিকে), চুঁচুড়া থানায় গোর্খা (ডান দিকে)।
কে এই গোর্খা? ব্যান্ডেল-চুঁচুড়া এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী। অন্তত ১০টি মামলা চলছে তার বিরুদ্ধে। সুলেখাদেবী খুনের ঘটনার সাত দিন পরে, গত ২ নভেম্বর একটি ডাকাতির পরিকল্পনার মামলায় পুলিশের হাতে সে ধরা পড়েছিল। তার জেল-হাজত হয়। সেই গোর্খাই সুলেখাদেবী খুনে যুক্ত! ভাবতে পারেননি তদন্তকারীরা। তাঁরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বুধবার সকালে জেল থেকে গোর্খাকে নিয়ে আসে চুঁচুড়া থানায়। তার পরেই জেরায় রহস্যের জট কাটতে থাকে।
কী হয়েছিল ২৬ অক্টোবর?
চুঁচুড়া থানার আইসি নিরুপম ঘোষকে গোর্খা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে মাধবী জানত, সুলেখাদেবীর কোথায় কী আছে। সে দিন ভোর ৫টা নাগাদ মাধবী ওই বাড়িতে যায়। পিছনে ছিল তারা তিন জন। সুলেখাদেবী দরজা খুলতেই সকলে একসঙ্গে ঢুকে পড়ে। সুবল ঢুকেই সুলেখাদেবীর থেকে আলমারির চাবি চায়। তারপর একটা কাপড় দিয়ে তাঁর মুখ বাঁধতে যায়। তখনই তাকে দেখেই চিনতে পারেন সুলেখাদেবী। কারণ, সুবল কিছুদিন আগেই তাঁর বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করে গিয়েছিল। চিনে ফেলায় সুবলই হেঁসো দিয়ে সুলেখাদেবীর গলা কেটে দেয়। তিনি লুটিয়ে পড়তেই আলমারি খুলে নগদ টাকা ও গয়না হাতায় তারা।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘গোর্খা কবুল করেছে আলমারিতে অনেক ৫০০ টাকার নোট ছিল। তার থেকে মাধবীরা তাকে মাত্র ১০টা দেয়। কম ভাগ পাওয়ার রাগেই গোর্খা সকলের কথা জানিয়ে দিল বলে মনে হচ্ছে।’’
এখন ঠিক নগদ টাকা এবং সোনা কতটা খোয়া গিয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট।
——নিজস্ব চিত্র