হাতাহাতি দুই গোষ্ঠীর, তাতছে আরামবাগ

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যে দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়ায়, তার একটির নেতা আতাউল হক। অন্যটির নেতা তাঁরই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ফরিদ খান।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৪১
Share:

চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে জখমরা। নিজস্ব চিত্র

ভোট-পর্বের শুরুর দিকে তেমন গোলমাল দেখা যায়নি। আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, হয়তো এ বার শান্তির ভোট দেখতে পাবেন তাঁরা। কিন্তু হুগলিতে ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা বাড়ছে এই মহকুমায়। বিরোধীদের অভিযোগ তো রয়েছেই, শাসকদলের অন্দরের গোলমালও বেআব্রু হচ্ছে।

Advertisement

বুধবার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের সামনেই বচসা এবং হাতাহাতিতে জড়ালেন গোঘাট-২ ব্লকে দলের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁর জেরে প্রার্থীর হাত থেকে পড়ে যায় তাঁর মোবাইল ফোন। প্রার্থীর নিরাপত্তারক্ষীরা অশান্তি থামাতে পারেননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। সেই গোলমালের আগে বেঙ্গাই এলাকার প্রার্থীর রোড শো চলাকালীন পশ্চিমপাড়ার অনুপনগরে একপ্রস্ত কুড়ুল, কাটারি, লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গোষ্ঠী। ভাঙচুর চালানো হয় এক নেতার আওতায় থাকা তৃণমূল কার্যালয়ে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১২ জন জখম হন। তাঁদের কামারপুকুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চার জনকে আরামবাগ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যে দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়ায়, তার একটির নেতা আতাউল হক। অন্যটির নেতা তাঁরই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ফরিদ খান। তবে, কয়েক বছর ধরেই এলাকায় ক্ষমতা দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মারপিট লেগে রয়েছে। ভোটের মুখে দলের দুই নেতার এই কাজিয়া নিয়ে প্রার্থী অপরূপা এবং বিধায়ক মানস মজুমদার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, দলের তরফে আরামবাগে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত, মন্ত্রী অসীমা পাত্র বলেন, “আতাউল এবং ফরিদ দু’জনেই দলকে ভালবাসে। দু’জনেই দলের প্রথম সারির কর্মী। এটা ওঁদের নিজেদের লড়াই। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। বিধায়ককে বলেছি দু’জনকে বসিয়ে সমস্যা মেটাতে।”

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে গোঘাট-২ ব্লকে রোড-শো করছিলেন অপরূপা। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক, দলের ব্লক সভাপতি তপন মণ্ডল এবং আতাউল ও ফরিদ। দুপুর দেড়টা নাগাদ পশ্চিমপাড়ায় গোলমাল হয়। রোড-শো মাঝপথে থামিয়ে প্রার্থী সঙ্গের দলীয় নেতাদের নিয়ে আহত কর্মী-সমর্থকদের দেখতে কামারপুকুর ব্লক হাসপাতালে আসেন। প্রার্থীর সামনেই ফরিদ এবং আতাউলের লোকরা ফের বচসা এবং হাতাহাতিতে জড়ান। অশান্তির জন্য ফরিদ বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতিকে দায়ী করেন। তাঁদের তিনি গালিগালাজ এবং ব্লক সভাপতিকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ফরিদের অভিযোগ, ‘‘আতাউলকে প্রশ্রয় দিতেই বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতি আমার লোকদের উপর হামলা করল। তাঁদের নির্দেশেই দলীয় কার্যালয়টিও ভাঙচুর হয়েছে।” ব্লক সভাপতি তপনবাবুর দাবি, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমার যোগ নেই। দল পুরো বিষয়টা দেখছে।” আতাউলের দাবি, ‘‘গোলমাল কেন, জানা নেই।’’

তবে, আহত ফরিদ অনুগামীদের দাবি, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাস্টাররোলে ভুয়ো শ্রমিকদের নাম তুলে আতাউল অনুগামীরা সরকারি টাকা নয়ছয় করার প্রতিবাদ করাতেই হামলা হয়। আহত আতাউল অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, তোলা আদায়, মারধর করে পুরো অঞ্চলকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছে ফরিদ এবং তার লোকরা। প্রতিবাদ করাতেই এ দিন কুড়ুল-কাটারি নিয়ে হামলা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement