গৌতম লোহার।—নিজস্ব চিত্র।
এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করে খুনের দায়ে পড়শি এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। মঙ্গলবার চুঁচুড়ার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মানস বসু হরিপালের বাসিন্দা গৌতম লোহার ওরফে ভোম্বলকে ওই সাজা শোনান।
সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরীকে খুনের ঘটনা ঘটেছিল ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন দুপুরে ১৩ বছরের মেয়েটি পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ পরেও সে ঘরে না ফেরায় বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পুকুরের পাশে ঝোপের মধ্যে মেয়েটির নগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। ভোম্বলকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই দিনই মেয়েটির জেঠিমা হরিপাল থানায় ভোম্বলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ভোম্বলকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার আগের রাতে ওই কিশোরী ঘরের দাওয়ায় ঘুমিয়েছিল। ভোম্বল ‘খারাপ উদ্দেশ্যে’ তার পা ধরে টানে। মেয়েটির চিৎকারে সে ধরা পড়ে যায়। ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রা রেহাই মেলে তার। পরের দিনই মেয়েটি ওই ভাবে খুন হওয়া এবং ভোম্বলকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে দেখে তার প্রতি সন্দেহ দৃঢ় হয়। ঘটনার তিন মাসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার। চুঁচুড়ার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে মামলার শুনানি হয়। মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ভোম্বলই মেয়েটিকে যৌন নির্যাতন এবং শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে।’’ তিনি জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিচারক ভোম্বলকে দোষী সাব্যস্ত করেন। বিদ্যুৎবাবু আসামীর ফাঁসি দাবি করেছিলেন। ওই যুবক অবশ্য বিচারকের কাছে আর্জি জানায়, তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে তাই সাজার পরিমাণ যেন কমিয়ে দেওয়া হয়। সব দিক বিবেচনা করে বিচারক তাকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান। ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের দায়ে তার ৩ বছর কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাস কারাবাসের সাজা শোনান বিচারক।
এ দিন আদালত চত্বরে নিহত কিশোরীর মা বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ফাঁসি হলে আরও খুশি হতাম।’’