ধর ধর, এই রে চলে গেল...!
বিশাল একটি মই লাগানো ছোট মালবাহী গাড়িটি হুস করে বেরিয়ে যেতেই এমন খেদোক্তি মোটরবাইক, সাইকেল নিয়ে পাড়ার রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো কাকা, দাদা, ভাইদের। ধরতে না পারার আফশোস শেষ হওয়ার আগেই ওই গাড়ির পিছনে মোটরবাইক নিয়ে ধাওয়া করলেন কয়েক জন। শেষমেশ সেটির পথ আটকে তাঁদের দাবি, ‘না, আগে আমাদের পাড়ায় যেতে হবে’।
লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজোর দিনে পুরোহিতদের যেমন হাল হয়, বেলুড়, লিলুয়া জুড়ে সিইএসসি-র কর্মীদের এখন তেমনই দশা। এ ভাবেই তাঁদের ‘পাকড়াও’ করার এই ছবি সর্বত্র। মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের পর থেকে যার মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে বলেই দাবি বিদ্যুৎ-কর্মীদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরেও বেলুড় ও লিলুয়ার বেশ কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন। অবিলম্বে বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর দাবিতে পাল্লা দিয়ে চলছে বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের রাস্তা অবরোধ। সঙ্গে সিইএসসি-র কর্মীদের কারা আগে পাকড়াও করতে পারবে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সিইএসসি-র এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘হয়তো গভীর রাতে কোনও এলাকার বাতিস্তম্ভে উঠে কাজ করছেন কর্মীরা, নীচে সেই বাতিস্তম্ভ ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অন্য পাড়ার বাসিন্দারা। নামলেই আর একটি বাড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। পরিস্থিতি এমনই!’’ ফলে সিইএসসি-র আধিকারিক থেকে কর্মী, সকলেরই এখন প্রাণন্তকর অবস্থা। কোন পাড়া ছেড়ে কোন পাড়ায় যাবেন, তা নিয়েই চরম ফাঁপরে পড়ার অবস্থা তাঁদের। সিইএসসি-র হাওড়া ডিভিশনে একটি ফোন রাখতে না রাখতেই ঢুকছে আর একটি ফোন। এ দিন পর্যন্ত বেলুড় ও লিলুয়া মিলিয়ে প্রায় ১০০টি তার ছেঁড়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে সিইএসসি-র কাছে। ক্রমশ সেই সংখ্যা বাড়ছে। সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, ঝড়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে হাওড়ায়। এখানে ওভারহেড তার বেশি থাকায় তাতে গাছ পড়ে বিপত্তি বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাওড়ায় কর্মীদের ৫০টি অতিরিক্ত দল নামানো হয়েছে। সিইএসসি-র কর্তাদের দাবি, প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজও বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে হয়ে যাবে।
তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট না মেটায় বুধবার রাতে বি কে পাল টেম্পল রোড, ডন বস্কো মোড়, ভট্টনগর এলাকায় পথ অবরোধ হয়। ওই দিন সারা রাত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ চলার পরেও বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎহীন ছিল বেলুড় রাজেন শেঠ লেন, ভোট বাগান, জয়বিবি রোড, ঘুসুড়ি সরকারি আবাসন, জাজোডিয়া গার্ডেন আবাসন-সহ বিভিন্ন এলাকার বিক্ষিপ্ত জায়গা। এর প্রতিবাদে এ দিন সকালে এক ঘণ্টার জন্য গিরিশ ঘোষ রোড অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। হাওড়ামুখী গাড়ি আটকে পড়ে তাতে। আটকে যায় স্কুলের গাড়িও। অভিযোগ, ঝড়ের পরে দু’দিন কেটে গেলেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থা চলছেই। ফলে জলের পাম্প চালানো যাচ্ছে না। গরমে হাঁসফাঁস করা অবস্থা হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। অগত্যা পানীয় জল কিনে খেতে হচ্ছে আবার দৈনন্দিন কাজকর্মের জল রাস্তার কল থেকে বয়ে আনতে হচ্ছে।
বেলুড় ও লিলুয়ার বড় রাস্তা পাশাপাশি গলির ভিতরেও গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, কলকাতায় বৈশাখের আগে গাছের ডালপালা ছাঁটা হলেও হাওড়ায় তেমন কিছু হয় না। যদিও হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (বিপর্যয় মোকাবিলা) শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘গাছের ডালপালা প্রায়ই ছাঁটা হয়। তবে এখন ঝগড়ার সময় নয়। আমরা সিইএসসি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেলুড় ও লিলুয়ায় ভাঙা গাছ সরাচ্ছি। তার পরে ওঁরা কাজ করছেন।’’
তবে কোন পাড়ায় আগে কাজ হবে, তা নিয়ে লড়াই চলছেই!