কোথাও মারধরে আহত হয়ে চটকল-শ্রমিক হাসপাতালে। কোথাও ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগে কিছু শ্রমিক গ্রেফতার। আহত ও ধৃত সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে বালি ও বাউড়িয়া চটকলে কাজ রুখে দিলেন শ্রমিকেরা।
মারধরে আহত বালি চটকলের শ্রমিক রীতেশ পাণ্ডে এখনও হাসপাতালে। তাঁর উপরে অত্যাচার এবং তাঁকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে স্থায়ী শ্রমিকদের কেউই বুধবার কাজে যোগ দেননি। ঠিকাদার কিছু অস্থায়ী শ্রমিককে দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। শ্রমিক-বিক্ষোভে অচল বালি জুট মিল। চটকলে পুলিশ বসেছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ওয়ান্ডিং বিভাগের শ্রমিক রীতেশকে মারধর ও বরখাস্ত করার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান কয়েক হাজার শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, ওই শ্রমিক বাড়তি সময় কাজ করতে না-চাওয়ায় তিন অফিসার তাঁকে যথেচ্ছ কিল-চড়-লাথি মেরেছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে অনড়। এ দিন সকালে স্থায়ী শ্রমিকেরা চটকলে জড়ো হলেও কাজে যোগ দেননি। কর্তৃপক্ষ কিছু ঠিকা শ্রমিককে দিয়ে তাঁত বিভাগে কাজ চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাঁচা মালের অভাবে তা-ও বন্ধ করে দিতে হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, পুজোর আগে কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে ঝামেলা পাকাচ্ছেন।
চটকল-কর্তৃপক্ষ গোলমালের দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। এ দিন বালি জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজার (পার্সোনেল-অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অতনু চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, রীতেশকে মোটেই অন্যায় ভাবে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বলা হয়নি। তাঁকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই শ্রমিক তা না-শুনে বাড়ি চলে যান। পরের দিন কাজে যোগ দিতে এসে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অতনুবাবুর অভিযোগ, ছাঁটাই করা হয়েছে শুনেই দীনেশ সিংহ নামে এক অফিসারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন রীতেশ। ধস্তাধস্তি বেধে যায়। সেই সময় ওই শ্রমিকেরও আঘাত লাগে।
রীতেশ আগেও নানা ভাবে চটকলে ঝামেলা পাকিয়েছেন বলে অতনুবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “ওই শ্রমিকের অন্যায় কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই ওকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য শ্রমিকদের অনুরোধ করছি, কাজে যোগ দিন। অহেতুক সমস্যা করে চটকল বন্ধ করে দেবেন না।”
অচলাবস্থা কাটানোর জন্য জেলা শ্রম দফতরকে চটকল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বলেন, “পুজোর সময় ওই চটকল যাতে অচল না-হয়, তার জন্য সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অন্য যে-সব কারখানা অচল হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খোলার ব্যবস্থা হয়েছে। বালি চটকলে সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে।”
মন্ত্রী বিভিন্ন কারখানা চালু রাখার কথা বলছেন। বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার জুটমিলের কর্তৃপক্ষও ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের একাংশের বিরোধিতায় এ দিন সেখানে উৎপাদন শুরু হয়নি। মঙ্গলবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, বুধবার কারখানা খুলে যাবে। কিন্তু বোনাস কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এ দিন সকালে শ্রমিকদের একাংশ কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের ঢুকতে দেননি। এর আগে কারখানায় ভাঙচুর এবং অফিসারদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে। কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ২৫ জন শ্রমিককে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন। প্রহৃত অফিসারদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে ধরে। শ্রমিকেরা এ দিন দাবি তোলেন, ধৃতদের না-ছাড়লে উৎপাদন চালু করতে দেওয়া হবে না।
বাউড়িয়া চটকলের এক কর্তা জানান, আধিকারিকদের প্রাণসংশয় হয়েছিল। ২৫ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে। তিন জন ধরা পড়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। তবে আলোচনায় বোনাস-সমস্যা মিটে গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার কথা।