প্রতিবাদের হাতিয়ার পোস্টকার্ডও

দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন শ্রীরামপুরে টিএমসিপি-র তরফে মিছিল করা হয়। শ্রীরামপুর কলেজের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। শেষ হয় বটতলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২৭
Share:

বার্তা: চলছে চিঠি লেখা। এই চিঠিই পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যেকের হাতে পোস্টকার্ড। সবাই তাতে লিখতে ব্যস্ত। চিঠির বয়ান এবং প্রাপকের ঠিকানা একই। মঙ্গলবার পৌষের দুপুরে এই পোস্টকার্ড আসলে হয়ে উঠেছিল নাগরিক-প্রতিবাদের হাতিয়ার।

Advertisement

রবিবার দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের উপরে হামলার ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদে সরব হুগলির নাগরিক সমাজ। শ্রীরামপুরের নাগরিকদের একাংশ ঠিক করেছেন, শিক্ষাঙ্গনে ‘গুণ্ডামি’র প্রতিবাদ পৌঁছে দেবেন রাষ্ট্রপতির কানে। সেই কারণেই পোস্টকার্ড লেখা। হুগলির উত্তরপাড়া এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়াতেও এ দিন সাধারণ মানুষ পথে নামেন দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে।

মঙ্গলবার শ্রীরামপুর নাগরিক উদ্যোগের তরফে শহরের বইমেলার মাঠে পোস্টকার্ড লেখার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। যুবক, প্রৌঢ়, ছাত্রী, গৃহবধূ, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী— কে ছিলেন না সেখানে! শিক্ষক এবং কবি রামকিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ। শিক্ষকেরা ছাত্র গড়েন। ছাত্র-শিক্ষকের উপরে হামলার অর্থ সমাজের আঁতুড় ঘরে আক্রমণ।’’ সেতার-শিল্পী, শহরের প্রবীণ বাসিন্দা ধ্রুব বাগচির কথায়, ‘‘ওখানে যা ঘটেছে, তার সমবেত প্রতিবাদ জানানো দরকার।’’ এক সুরে দু’জনে জানান, রাষ্ট্রপতি রাজনীতির উর্ধ্বে। তাই তাঁর কাছেই অভিযোগ জানাচ্ছেন।

Advertisement

দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন শ্রীরামপুরে টিএমসিপি-র তরফে মিছিল করা হয়। শ্রীরামপুর কলেজের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। শেষ হয় বটতলায়। জেলা টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ রাস্তায় নেমেই বুক চিতিয়ে লড়বে।’’

ওই ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় উত্তরপাড়ায় নাগরিক-মিছিল হয়। এপিডিআর, উত্তরপাড়া কোটনিস কমিটি, সম্মিলিত নাট্য সংসদ, স্বাধিকার ও সম্প্রতি রক্ষা মঞ্চ-সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা পোস্টার হাতে মিছিলে পা মেলান। উত্তরপাড়া স্টেশনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। মাখলা, কাঁঠালবাগান-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরে। মিছিল যত বেড়েছে ততই তাতে ভিড় বেড়েছে। কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা, নাট্যকার তপন দাস বলেন, ‘‘প্রতিবাদী মানুষের মুখ বন্ধ করতেই কেন্দ্রের শাসকেরা নির্বোধের মত আক্রমণের পথে যাচ্ছেন। প্রতিবাদকে ওঁরা ভয় পাচ্ছেন।’’ বিশিষ্ট নাট্যকর্মী সোনালি ঘোষ রায়ের কথায়, ‘‘কেন্দ্রের শাসকদল প্রতিবাদী স্বরকে টুঁটি টিপে ধরতে চাইছে। তাকে প্রতিহত করতেই রাস্তায় নামা। আরও বেশি প্রতিবাদ হোক।’’ মিছিলের শেষে পথসভা হয়।

উলুবেড়িয়াতেও নাগরিকদের একাংশ রাস্তায় নামেন। সন্ধ্যায় তাঁরা উলুবেড়িয়া উপ-সংশোধনাগারের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এই জমায়েতে যেমন অশীতিপর শিক্ষক ছিলেন, তেমনই ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বহু মানুষ ভিড় জমান।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ৮২ বছরের মহম্মদ আবদুল্লা বলেন, ‘‘ওই ঘটনা শুধু ছাত্রী বা শিক্ষিকার উপরে হামলা নয়, এটি প্রতিবাদী কন্ঠকে রোধ করার অপচেষ্টা। এখনও যদি আমরা এর বিরুদ্ধে পথে না নামি, দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ নাট্যবক্তিত্ব অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেশে আধা ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান লক্ষ্য করছি। একমাত্র সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করলেই ভয় দূর হবে।’’ সাংস্কৃতিক কর্মী প্রদীপ জানা, লোকসংস্কৃতি গবেষক তপনকুমার সেন, ছাত্রী উষা পারভিন— সকলেই ওই ঘটনার নিন্দা করেন।

এই কর্মসূচির আয়োজন করেছিল উলুবেড়িয়া নাগরিক মঞ্চ, ইনস্টিটিউট অ্যান্ড লাইব্রেরি, অধ্যাপক অরুণ দাশগুপ্ত স্মৃতিরক্ষা সমিতি, বইমেলা সমিতি, দ্বান্দিক সংস্কৃতি সংস্থা এবং উলুবেড়িয়া সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ। উদ্যোক্তাদের তরফে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি চলবে। মানুষকে নিয়ে আমাদের বক্তব্য এবং প্রতিবাদের ভাষা প্রতিদিন সভা করে সবার মধ্যে পৌঁছে দেব। এটা না করলে নিজেদের অপরাধী মনে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement