প্রতিবাদ: পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: দীপঙ্কর দে
ক্ষোভের আঁচ বাড়ছে!
আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাননি, এই অভিযোগে রবিবার হুগলির হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের প্রধান তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস পাঠকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। তৃণমূলের একদল কর্মীর সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
আমপান ক্ষতিগ্রস্তদের বাছাই নিয়ে হরিপাল ব্লক জুড়ে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে শাসক দলের নেতাদের আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠ বড়লোকেরা অনৈতিক ভাবে এই সুবিধা পেয়েছেন। সহদেব পঞ্চায়েতেও এমন অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ কয়েকশো গ্রামবাসী চক অনন্ত এলাকায় প্রধানের বাড়ির সামনে জড়ো হন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচাবাড়ির ক্ষেত্রে কেন ক্ষতিপূরণ মিলছে না, কেন বড়লোকেরা টাকা পেয়েছেন, এই নিয়ে তাঁরা হইচই শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক মহিলা ছিলেন।
তৃণমূলের কিছু কর্মী ঘটনাস্থলে এলে দু’পক্ষের বচসা হয়। হরিপাল থানার পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ ছড়ানোর অভিযোগে তৃণমূলের কিছু লোক স্থানীয় কালুবাটী মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন।
বিক্ষোভকারীরা অবশ্য জানান, ডাকাতিয়া খালের ধারে গরীব মানুষের বাস। অনেকে ঝুপড়িতে থাকেন। খেতমজুরি করেন। ঝড়ে তাঁদের ঘরের ক্ষতি হলেও ক্ষতিপূরণ পাননি। এমনই এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘আমার মতো অনেক গরিব মানুষেরই সরকারি সাহায্য জোটেনি।’’ একই অভিযোগ বিরোধীদেরও। হরিপাল বিধানসভা বিজেপির আহ্বায়ক মনসা পাকিরা বলেন, ‘‘ঝড়ে যাঁদের ঘর হেলে গিয়েছে, ভাঙা চাল দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ছে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি। তৃণমূল নেতাদের অনেক আত্মীয়, ঘনিষ্ঠরা দোতলা, তিন তলা বাড়ি থাকা সত্বেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলছেন।’’
দেবাশিসবাবু অভিযোগ মানেননি। বিক্ষোভের পিছনে তিনি দলেরই একাংশের হাত দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘দল যেহেতু আমাকে ব্লক সভাপতি করেছে, তাই আমাদেরই কিছু ব্যক্তি কুৎসা, অপপ্রচার করে চক্রান্ত করে বিজেপির হাত শক্ত করছেন। ৪০-৫০ জনকে ভুল বুঝিয়ে পাঠানো হয়েছিল। পাড়া-পড়শিরা বেরিয়ে আসাতে ওঁরা চলে যান।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের কাছে যা আবেদন এসেছিল, সব বিডিও দফতরে পাঠিয়েছি। কোনও দোতলা বাড়ির লোক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কেউ টাকা না পেয়ে থাকলে বিডিও অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। টাকা পাওয়া উচিত নয়, এমন কেউ পেয়ে থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমাদের দলের কেউ অনিয়ম করে থাকলে দল ব্যবস্থা নেবে। সেই সিদ্ধান্ত দুর্বল চিত্তে নেওয়া হবে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই প্রমাণ মানুষ পেয়েছে।’’
তবে ওই পঞ্চায়েতে আমপান নিয়ে অন্য অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় এক নেতা গ্রামবাসীর ক্ষতিপূরণ থেকে ‘কাটমানি’ নিয়েছেন, এই অভিযোগে শনিবার গ্রামে শোরগোল পড়ে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়ে।