রসনা: পেটপুজোর ছিল এমনই আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র
শ্রাবণ শেষ হতে চলল। অথচ, বাজারে ইলিশ প্রায় অমিল। তা বলে কি ‘ইলিশ উৎসব’ থেমে থাকবে?
বৃষ্টিভেজা রবিবারের দুপুরে চন্দননগরের পাতালবাড়ি সংলগ্ন গঙ্গাপাড়ে কত যে ইলিশ! কোনওটা এসেছে ডায়মন্ড হারবার থেকে, কোনওটা ব্যান্ডেলের চকবাজার থেকে। ওড়িশার পারাদ্বীপের ইলিশ নিয়েও হাজির কেউ কেউ। ‘ইলিশ উৎসব’ বলে কথা! সরু চালের ভাতের সঙ্গে প্রথমেই পাতে পড়ল ইলিশের তেল। তারপর এল ইলিশ ভাজা এবং ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক। এল পাতুরিও। আর ছিল ইলিশ পোলাও এবং ইলিশের মালাইকারি।
স্থানীয়েরা তো ছিলেনই, নোনাটোলা জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির উদ্যোগে প্রথম বছরের এই উৎসবে চুঁচুড়া, মগরা, জিরাট, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী, দুর্গাপুর-সহ নানা অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০০ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। টিকিট কেটে সপরিবারেও আসেন অনেকে। এ শহর যাঁদের অচেনা, তাঁরা প্রথম সুযোগেই একটু ঘুরে নিলেন। তারপরে জড়ো হলেন গঙ্গার পাড়ে খাটানো শামিয়ানার তলায়। নদীর হাওয়ায় ইলিশের গন্ধ। তার মধ্যে প্রথমে ইলশেগুঁড়ি, তারপরে শুরু হল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আর পায় কে! কিন্তু একটু গান হবে না উৎসবে? হয় নাকি! সে আয়োজনও করেছিলেন উদ্যোক্তারা। এক বাউল শিল্পী গেয়ে উঠলেন ‘লালপাহাড়ির দেশে’র গান। বাঁশিতে বেজে উঠল রবীন্দ্র-সুর।
বেলা গড়াল। উদ্যোক্তারা হাঁক পাড়লেন, ‘টেবিল রেডি’। টেবিল তখন ভরেছে মাটির থালা-গ্লাস-জগে। পাশে রাখা তালপাতার ছোট্ট পাখা। সেটাই ‘মেনু কার্ড’। মেনুতে অবশ্য লেবু-লঙ্কা, ডাল, আলুভাজা, আনারসের চাটনি, পাঁপড় এবং বহরমপুরের ছানাবড়াও ছিল। সবশেষে ছিল কলাপাতায় মোড়া মিষ্টি পান। উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি অরুণ চক্রবর্তী।
খাওয়া শেষে একযোগে অনেকেই আগামী বছরও এই উৎসব আয়োজনের আগাম আব্দার জানালেন। কিন্তু ইলিশের আকালে এই উৎসব আয়োজনের সাহস পেলেন কী করে উদ্যোক্তারা? তাঁদের পক্ষে জুঁই বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভরা বর্ষায় গঙ্গার পাড়ে পাত পেড়ে ইলিশ খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু ইলিশের জোগান তেমন না-থাকায় প্রথমে আমরা চিন্তাতেই ছিলাম। যাঁরা উৎসবে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই এগিয়ে এসেছেন। তাঁদেরই অনেকে ইলিশ নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়ে নেন। ফলে, আমাদের কাজ সহজ হয়ে যায়।’’
দুর্গাপুরের বাসিন্দা সিরিন নাহার এই প্রথম দেখলেন এ শহর। দেখলেন গির্জা, স্ট্র্যান্ড, ফরাসি জাদুঘর, জগদ্ধাত্রীর কাঠামো, নন্দদুলাল মন্দির। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে শুধু চন্দননগরের নাম শুনেছি। আগে কোনও দিন আসার সুযোগ হয়নি। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে উৎসবের কথা জানতে পেরে আর যোগ দিতে দেরি করিনি। শহরও দেখা হল। ইলিশও খাওয়া হল। এমন উৎসব যেন আগামী বছরও হয়।’’