গেট ইস্টার্ন বার খোদ স্টেশন চত্বরে

কুলগাছিয়ায় রমরমিয়ে চলছে চোলাই বিক্রি

হাওড়া-হুগলির নানা স্টেশনে এখন নেশার রমরমা! মদ, গাঁজা থেকে নেশার সামগ্রীর বিকিকিনি চলে দেদার। কী ভাবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ কুলগাছিয়া।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

প্রকাশ্যেই চোলাই মদ বিলির ব্যবস্থা। ছবি: সুব্রত জানা

এ ‘পানশালা’ খোলে ভোর ৬টায়। বন্ধ হয় রাত ১২টায়। এ ‘পানশালা’র চারদিক খোলা। বসার বেঞ্চ হল ঢালাই চাঙড়। গ্লাস রাখার টেবিলও তা-ই। ভিড়ের কমতি নেই কোনও সময়।

Advertisement

এখানে মদ আসলে চোলাই। ‘পানশালা’র ঠিকানা— দক্ষিণ-পূ্র্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের কুলগাছিয়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন চত্বর। নামটাও গালভরা— ‘গেট ইস্টার্ন বার’!

‘‘বুঝলেন না কেন ঠেকের এমন নাম? আরে ঠেকটা যে কুলগাছিয়া স্টেশনের লেভেল ক্রসিং গেটের পূর্ব দিকে’’— চোলাই ঠেকের নাম-মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দেন যে কোনও নেশাড়ু। ভ্যানচালক থেকে অটোচালক, বাসচালক, খালাসি, দিনমজুরের ভিড়ে ঠেক সবসময় সরগরম। রাতে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার সময়ে মাঝেমধ্যে ঢুঁ মারেন কিছু নিত্যযাত্রীও। প্রতিদিন কয়েক হাজার জারিকেনে চোলাই আসে। গ্লাস-পাউচে বিক্রি হয়।

Advertisement

চোলাই কারবারিরা জানান, স্টেশনের উত্তর দিকে রেলেরই পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে চোলাইয়ের জারিকেন এনে জমা করা হয়। প্রয়োজনমতো তা ঠেকে আনা হয়। কোথা থেকে চোলাই আসে? কারবারিরা জানান, উলুবেড়িয়ার সমরুখ, মদাইয়ের মতো জায়গায় মদের ভাটি রয়েছে। সেখান থেকেই সরাসরি চোলাই আসে।

এই ঠেকের কারণে বহু নিত্যযাত্রী অসুবিধা পড়েন। ঝক্কি পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। তাঁদের অভিযোগ, ঠেকের ধারে জমা পাউচ বাতাসে উড়ে এসে তাঁদের বাড়িতে পড়ে। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়। চোলাই কারবারিদের সঙ্গে রেল পুলিশের নিয়মিত মাসোহারার ব্যবস্থা আছে বলেই রেলের জমিতে এই ব্যবসা চলছে, এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে। অভিযোগ মানেনি রেল পুলিশ। তাদের দাবি, মাঝেমধ্যেই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, চিত্রশিল্পী তপন কর বললেন, ‘‘টিকিট কাউন্টার পড়ে দক্ষিণ দিকে। যাত্রীদের টিকিট কাটতে গেলে লেভেল ক্রসিং গেট পার অনেকটা হেঁটে যেতে হয়। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ১ নম্বর প্লাটফর্মের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা করা হোক। তা হলে সেই রাস্তা ধরে ওভারব্রিজ পেরিয়ে সহজেই নিত্যযাত্রীরা টিকিট কাউন্টারে যেতে পারবেন। কিন্তু রেল তা করেনি।’’ তপনবাবুর সন্দেহ, ওই রাস্তা করতে হলে চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে হবে। সেই কারণেই হয়তো রাস্তাটি হল না। রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তরফে জানানো হয়, প্রযুক্তিগত কারণেই রাস্তাটি করা যায়নি। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।

তা হলে ওই ঠেকের রাস্তা হয়েই কি ১ প্ল্যাটফর্মে যাতায়াত করতে হবে?

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর ডিভিশনের এক কর্তা জানান, চোলাইয়ের ঠেক তুলতে বড়সড় অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু তা কবে হবে, সেটাই প্রশ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement