অর্থবর্ষ শেষ হল। কিন্তু চাষিদের দেওয়া ঋণের টাকা সে ভাবে ফেরত না-আসায় নাভিশ্বাস উঠছে হুগলির কৃষি সমবায়গুলির। এই অবস্থা বেশি দিন চললে পরের মরসুমের ধান-আলু বা আনাজ চাষের ক্ষেত্রে চাষিদের ঋণ পেতে সমস্যা হবে বলে মনে করছেন সমবায়ের কর্তারা।
কিন্তু কেন এ বার ঋণ অনাদায়ী থেকে গেল?
কৃষি সমবায়গুলির কর্তারা জানিয়েছেন, অতি ফলনের জেরে এ বার ধানের দাম পাননি অনেক চাষি। তার উপরে সরকারের তরফে সহায়ক মূল্যে ধান কেনাও শুরু হয়েছে দেরিতে। এই জোড়া ধাক্কাতেই এ বার চাষিদের অবস্থা সঙ্গিন। ঋণ নিয়েও তাঁরা শোধ করতে পারছেন না। ফলে, সমবায়ের তরফেও ‘লিড ব্যাঙ্কে’র টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। পরে ঋণ শোধ করতে গেলে বাড়তি সুদ গুনতে হবে চাষিদের। এ নিয়েও চাষিরা উদ্বেগে রয়েছেন।
জেলা কৃষি সমবায় দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিরুদ্ধ আবহেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে, দ্রুত ঋণ শোধ না হলে পরের চাষে ঋণ দিতে সমস্যা হবে।’’ জেলার ‘সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ’-এর এক কর্তা বলেন, ‘‘চাষিদের ৭ শতাংশ হারে সুদে ঋণ দেওয়া হয়। তবে, মার্চের মধ্যে চাষিরা ধানের ঋণের টাকা শোধ করলে ৩ শতাংশ হারে সুদের টাকায় ছাড় পান। কিন্তু এখন টাকা সময়ে শোধ না-করায় চাষিদের মোট ১০ শতাংশ হারেই সুদের টাকা গুনতে হবে।’’
হুগলিতে কৃষি সমবায় রয়েছে ৩৭২টি। প্রতিটি সমবায়ে অন্তত এক হাজার সদস্য রয়েছেন। গ্রামীণ এলাকায় মূলত ওই সমবায়গুলি থেকে নেওয়া ঋণের টাকাতেই চাষবাসের কাজ করেন চাষিরা। ফসল উঠলে তা বিক্রি করেই সমবায়ের ধার শোধ করেন তাঁরা। গত বছরের জুন মাসে ধান চাষের জন্য ঋণ নেন চাষিরা। সেই টাকা চলতি আর্থিক বছরে ৩১ মার্চের মধ্যেই শোধ করার কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাষিরা ঋণের টাকা শোধ করতে পারেননি বলে অভিযোগ। কোথাও কোথাও মাত্র ২০ শতাংশ ঋণ শোধ হয়েছে বলে জেলা সমবায় দফতর সূত্রে খবর।
তারকেশ্বরের মতো কৃষিপ্রধান ব্লকে মোট ১৮টি সমবায় রয়েছে। প্রতিটি সমবায়ই গত ধান চাষের মরসুমে ব্লকের কয়েক হাজার চাষিকে ঋণ দিয়েছিল। তারকেশ্বরের বিবেকানন্দ কৃষি সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই এখনও ঋণ শোধ করতে পারেননি। প্রায় একই ছবি পুরশুড়া, জাঙ্গিপাড়াতেও।