নিকাশি-দুর্নীতি রুখতে হাওড়ায় ভরসা প্রযুক্তি

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, ৬৬টি ওয়ার্ডের পুর পরিষেবার কাজ পুর কমিশনারের একার পক্ষে তদারকি করা কার্যত অসম্ভব।

Advertisement

দেবাশিস দাশ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

বেহাল: হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডে আবর্জনায় ভরে রয়েছে নিকাশি নালা। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিন ধরেই হাওড়া পুরসভা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে প্রশাসকমণ্ডলী। ফলে পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলরেরা যে কাজের দেখভাল করতেন, এখন সে কাজই দেখার দায়িত্ব প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান বিজিন কৃষ্ণের। তাঁর একার পক্ষে এতগুলি এলাকার কাজ তদারকি করা কার্যত অসম্ভব। তাই মোবাইল বেস্ড মনিটরিং সিস্টেম নামের বিশেষ প্রযুক্তি চালু করছে পুরসভা।

Advertisement

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোথায় নিকাশির কাজ হচ্ছে, তার ছবি এবং এলাকার মানচিত্র পুরসভার সদর দফতরে বসেই দেখা যাবে। কাজে কোনও ফাঁকি দেখতে পেলেই সংশ্লিষ্ট পুর ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন পুর কমিশনার। নিকাশির সংস্কারে ফাঁকি রুখতে এই পদক্ষেপ করছে হাওড়া পুরসভা।

এমনিতেই নিকাশির কাজে নানা ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ নিয়ে জেরবার পুরসভা। অর্থ বরাদ্দ করা সত্ত্বেও বর্ষার মোকাবিলা করতে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা এখনও হয়নি। ইতিমধ্যেই এমন অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুরসভার কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে। তা ঠেকাতেই পুরকর্তারা যে এই প্রযুক্তি কার্যকর করছেন, তা বলাই বাহুল্য। হাওড়া পুরসভার কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান বিজিন কৃষ্ণ জানান, এই আধুনিক ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই তা চালু হয়ে যাবে। পুর কমিশনার বলেন, ‘‘শুধু নিকাশির কাজে নয়, এর পরে বিভিন্ন দফতরের কাজ খতিয়ে দেখতেও এই প্রযুক্তি চালু হবে। যাতে পুর পরিষেবার কাজে কোনও ফাঁকি না থাকে।’’

Advertisement

কী এই প্রযুক্তি?

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, ৬৬টি ওয়ার্ডের পুর পরিষেবার কাজ পুর কমিশনারের একার পক্ষে তদারকি করা কার্যত অসম্ভব। এ দিকে, সামনেই বর্ষা। তাই নিকাশির কাজকে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ হিসাবে ধরে, পুরসভার তরফে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এমন একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে এলাকার ছবি ও অবস্থান দেখাতে ও দৈনন্দিন কাজের রিপোর্ট পুরকর্তাদের দিতে বাধ্য থাকবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা ও ইঞ্জিনিয়ার। কোথায় কোথায় কাজ হচ্ছে, কী কাজ হচ্ছে, তার ছবি তুলে ওই অ্যাপে দিতে হবে।

পুর কমিশনার বলেন, ‘‘ওই অ্যাপে তারিখ এবং জায়গার নাম লিখতে হবে। যে জায়গায় কাজ হচ্ছে, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার যাচ্ছেন কি না এবং ঠিকাদারের লোক কাজ করছেন কি না, তা দেখা যাবে। কোনও সমস্যা হলেও সহজেই জানা যাবে।’’ তিনি জানান, হাওড়ায় ১০৭টি স্কিমের কাজ হচ্ছে। প্রতিটি স্কিম পুরসভায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

হাওড়া পুর এলাকায় বর্ষায় জল জমা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে, নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের একাংশের থেকে মোটা ‘কাটমানি’ চাইছেন, যে কারণে নিকাশির সংস্কার ঠিক মতো হচ্ছে না। ফলে নর্দমার পলি তোলা, ভূগর্ভস্থ নিকাশি এবং খালগুলি সংস্কারের কাজে চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ বার বর্ষাতেও হাওড়া ভাসতে পারে বলে আশঙ্কায় পুর কর্তারা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement